প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২২ , ৮:৪৭:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় ইলিশ সংকট আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন,উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার জেলে। নদীতে ইলিশের আকাল, দাদনদার ও বিভিন্ন এনজিওর ঋণের চাপ, এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে তেলের মূল্যবৃদ্ধি।
সময় যত গড়াচ্ছে জেলেদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। সব মিলিয়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো অবস্থা। একই অবস্থা মেঘনা-তেঁতুলিয়াপারের দাদনদার, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের। দিনদিন জেলেদের ওপর ঋণের বোঝা ভারী হওয়ায় অনেক জেলে মাছ শিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে বিকল্প পেশা খুঁজছেন।
জেলার মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৯ হাজার ৮৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে জেলেদের দাবি, অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন আরও কয়েক হাজার।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর জেলে, দাদনদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জীবনমান আরও নিম্নমুখী করবে।
তেঁতুলিয়া নদীর নয়নের খালের জেলে খোকন বলেন, ‘আগে তেল কিনতাম ৮০ থেকে ৮৬ টাকা করে। নতুন দামে ৭ লিটার তেল ৭৯৮ টাকায় কিনে পাঁচজন মাঝিমাল্লা নিয়ে নদীতে যাই। মাছ পেয়েছি ৬৮০ টাকার।’
হাকিমুদ্দিন ঘাটের ট্রলারের মাঝি সুজন বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় গত চার-পাঁচ দিন তাঁরা ঘাটে অবস্থান করছেন। ট্রলারের জন্য ৭ হাজার ৫০০ টাকায় এক ব্যারেল (২০০ লিটার) ডিজেল কিনেছেন। আগে লিটার কিনতেন ৮২ টাকা দরে, এখন ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
জেলে জাকির মাঝি বলেন, ‘গতকাল সকালে ১ হাজার ১০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিলে আমাদের আর থাকল কি? আমরা কীভাবে বাঁচব? কীভাবে সংসার চালাব? ৮০ টাকার তেল এক লাফে ১১৪-১২০ টাকা। আমাদের কথা ভাবার কেউ নাই।’
আড়তদার জুয়েল বলেন, ‘লাখ লাখ টাকা নদীতে। তাঁর ২০ জন মাঝি। একদিকে নদীতে মাছ নাই, অন্যদিকে তেলের দাম বাড়ছে। কী অবস্থা হবে আল্লাহ জানে।’
সরাজঘাটে অবস্থানরত তেঁতুলিয়ার জেলে সিরাজ বদ্দার বলেন, ‘এখানে কিছু মাছ পাওয়া যায়। তেলের দাম বাড়ার কারণে বরফের দামসহ খরচের পরিমাণ বাড়ছে, সব মিলিয়ে কূলকিনারা করতে পারি না।’
মেঘনার হাকিমুদ্দিন ঘাটের জেলে আব্দুল হক জাকির, নুরনবী, দুলাল, নোমান মাঝি, সরাজগঞ্জ ঘাটের আকতার, রিপন, মফিজ ও মান্নান মাঝি বলেন, অনেকে সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন। একে তো নদীতে তেমন মাছ নেই, তার ওপর তেলের দাম দিন দিন এভাবে বাড়লে তাঁরা কীভাবে নদীতে যাবেন? দিন দিন লোকসান গুনতে গুনতে কিছুদিন পর তাঁদের ট্রলার বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
মাছ ব্যবসায়ী কালাম বদ্দার ও জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, মাঝারি একটি ট্রলার সাগরে যেতে পাঁচ ব্যারেল (১ হাজার লিটার) আর বড় ট্রলারে ১০ ব্যারেল তেল লাগে। নতুন করে তেলের দাম বাড়ায় তাঁরা লোকসানে পড়েছেন।
উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শাহে আলম ও ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ মাঝি বলেন, একদিকে নদীতে মাছ কম। অন্যদিকে এক লাফে তেলের দাম ১১৪-১২০ টাকা হয়েছে। এটা জেলেদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জেলেদের কষ্ট হচ্ছে; সেটা তাঁরাও উপলব্ধি করতে পারছেন। জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুবিধা অব্যাহত থাকবে।