প্রতিনিধি ১৩ জুলাই ২০২২ , ৮:২৪:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
সঞ্জয় দাস, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
তিস্তা, শালকি, দেওনাইসহ অনেকগুলো নদী রয়েছে নীলফামারী জেলায়। আষাঢ় মাসে পানিতে টইটম্বুর থাকে এসব নদী। তবে প্রায় দুই সপ্তাহ হলো দেখা নেই বৃষ্টির। প্রখর রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, খাল, বিল ও নিচু জমিতে থাকা পানি।
এসব জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার সবকটি এলাকায় চলছে দেশি মাছ ধরার ধুম। ছোট-বড় সবাই মিলে শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিল ও জমি থেকে ধরছেন দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত মাছ ধরার ধুম দেখা যায় এলাকাগুলোতে। তবে বেশিরভাগই ধরা পড়ছে ছোট মাছ। বড় মাছ খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
কেউ জাল দিয়ে, কেউ পানি ছেঁকে আবার কেউ কেউ হাত দিয়ে মাছ ধরছেন। ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ও জোড়াবাড়ী ইউনিয়নে দেখা যায়, শুকিয়ে যাওয়া নদী, ক্ষেতের জমি, খাল ও বিলে নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও হাতে জাল নিয়ে মাছ ধরছেন।
বাকডোকরা গ্রামের নয়নবালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে মাছ ধরতে এসেছি। দুপুর পর্যন্ত এক কেজির মতো মাছ পেয়েছি। পুঁটি, দারকিনা ও টাকি মাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’
বড়রাউতার গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাড়ির পাশে একটি খালে পানি জমেছিল। এখন পানি হাঁটুর নিচে থাকায় ফান্দি জাল দিয়ে মাছ ধরছি। দুই কেজির মতো মাছ পাইছি। তার মধ্যে এক কেজি মাছ ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
তিনি আরও জানান, বড় মাছ নেই বললেই চলে। পানি কম থাকায় মাছের রেণুগুলো বেশি ধরা পড়ছে।
তিস্তার চর এলাকার রহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পানি কমে যাওয়ায় এলাকার লোকজন মিলে মাছ শিকার করছি। দিনে ৩-৪ কেজি পর্যন্ত ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ির জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেই মাছবিক্রেতার কাছে।’
মাছ কিনতে এসেছেন রওশন নামের একজন। তিনি বলেন, দেশি মাছের স্বাদ আলাদা তাই পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে মাছ কিনতে এসেছি।
ডোমারের শালকি ও দেওনাই নদীতে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা চলছে। বাড়ির সব সদস্য মিলে মাছ ধরার আলাদা মজা রয়েছে বলে জানালেন বিলকিস বানু।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে নাস্তা খেয়ে আমরা মাছ ধরতে নেমে পড়ি। ছোট জাল দিয়ে পানি ছেঁকে মাছ শিকার করছি। খাওয়ার জন্য মাছ রেখে বাকি মাছ শুঁটকি ও সিদলের জন্য রেখে তৈরি করা হবে।’
তালতলীর সাজু বলেন, ‘বিকেল পর্যন্ত ৫ কেজির মতো মাছ পাওয়া যায়। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকই মাছ কিনতে আসেন। তখন তাদের কাছে কিছু মাছ বিক্রি করে দিই। গত তিনদিনে মাছ বিক্রি করে আড়াই হাজার টাকা পেয়েছি।’
শালকি নদীতে মাছ ধরতে আসা আনোয়ারা বেগম জানান, রোদ থাকায় পানি কমে গেছে। তাই এক সপ্তাহ থেকে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাছ ধরছেন। নিজেরা খেয়ে ২০০ টাকার মতো মাছ বিক্রি করে সংসারের কাছে ব্যয় করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শালকি নদীর পানি কমে গেলে এই এলাকার সবাই মাছ ধরেন। দেশি মাছ ধরে আমরা শুঁটকি ও সিঁদল তৈরি করে বিক্রি করি। যে সময় পানি থাকে না আমরা সেই সময়ে মাছ ধরে সেসব মাছ লবণ দিয়ে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করি। দেশি মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি বলে শুঁটকি বিক্রি করে আমরা তিন মাস সংসার চালাই।