প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৭:০৮:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম সাকিব আল হাসান। তার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে দূর থেকে বহুদূরে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার বলা হয় তাকে। ২২ গজে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন সাকিব। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব জায়গা করে নিয়েছেন ইএসপিএন প্রকাশিত বিশ্বের বিখ্যাত ৯০ ক্রীড়াবিদের তালিকায়। বহু রেকর্ডের মালিক সাকিবের ক্যারিয়ারে সাফল্যের পাল্লা ভারি থাকলেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ‘প্রথম সুপারস্টার’। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানার পথে এই ৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডবের’ একজন সাকিবের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায়। পুরো নাম খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল। ছোটবেলায় ফয়সাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মা শিরিন শারমিন গৃহিণী। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর উম্মে শিশিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাকিব।
ক্রীড়া পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাকিব ছোটবেলা থেকে ছিলেন খেলাপাগল। তার বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে খেলেছেন ফুটবল। এমনকি তার এক স্বজন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার। তবে সাকিব বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট। মাগুরা ক্রিকেট লিগের দল ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে অনুশীলন করে পরে ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে খুলনার হয়ে খেলেন জাতীয় লিগে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে সাকিব বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালে; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। ওই বছরেই টি-টোয়েন্টিতেও জাতীয় দলের ক্যাপ পান তিনি। পরের বছরের ১৮ মে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তার।
ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ২০০৯ সালে অধিনায়কের পদ থেকে মোহাম্মদ আশরাফুলকে সরিয়ে দেয় বিসিবি। অধিনায়কত্ব পান মাশরাফী বিন মোর্তজা। আর তার ডেপুটি করা হয় সাকিবকে। পরে মাশরাফী ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব পান সাকিব। তার নেতৃত্বেই দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আইসিসির টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এবং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এর র জন্য মনোনয়ন পান তিনি। দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স সাকিবকে বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত করে।
২০০৯ সালে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন সাকিব। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এই তালিকার শীর্ষে থাকার রেকর্ড তার দখলে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১২ এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে তারা। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সাকিব ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
মাশরাফী আবারও ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব ফিরে পান সাকিব। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। পূর্ণ শক্তির টেস্ট দলের বিপক্ষে এটি প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের।
ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারালেও সাকিব-মুশফিকদের ব্যর্থতা ছিল চরমে। এতে অধিনায়কত্ব হারান সাকিব। পরে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে।
মাশরাফীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। পুরো দলের সঙ্গে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মাশরাফী অবসর নিলে দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান সাকিব। পরে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া তাকে।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সহঅধিনায়ক ছিলেন সাকিব। পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলে আট ম্যাচে ৬০৬ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করেন তিনি।
এ পর্যন্ত ৭০টি টেস্ট ম্যাচ খেলে সাকিব রান করেছেন ৪ হাজার ৬০০; উইকেট নিয়েছেন ২৪২টি। এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২৪৭টি; এই সংস্করণে তার রান ৭ হাজার ৫৭০, উইকেট শিকার করেছেন ৩১৭টি। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৪৯; রান ২ হাজার ৫৫১।
২০১৭ সালে মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। ক্রিকেটের যাবতীয় নিয়মকানুন ও নানা পরিবর্তনসহ খেলার ভালো-মন্দ নিয়ে আইসিসিকে সুপারিশ করে এই কমিটি।
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে খেলেন সাকিব। ২০১২ সালের আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সাকিব। শিরোপা জেতে তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ক্রিকইনফোর সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন তিনি।
মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন এই তারকা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে ছয় মাসের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। এ ছাড়া জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন করায় ২০১৯ সালে তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ভুল স্বীকার করার পর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন সাকিব। মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
গার্মেন্টসকর্মী রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ২২ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছন। সাকিব আল হাসানকে মামলার ২৮ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি করা হয়।
৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরের ঘোষণা দেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জানান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে খেলেই অবসরে যাবেন তিনি। এ সময় সাকিব আরও জানান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই ছিল এ সংস্করণে তার শেষ ম্যাচ। তবে ওয়ানডে খেলে যাবেন। পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসরে যাবেন তিনি।
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে কানপুরে টেস্টে মাঠে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব। আগামী ২১ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলে সাদা পোশাক তুলে রাখবেন সাকিব। ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি আগামী বছর পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পর্যন্ত খেলার কথা বলেছেন।আজ সাকিবকে আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তরে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা বলেন সাকিব, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো অ্যাভেইলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের বলা হয়েছে আমার কী পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’দেশে ফেরার আগে নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় আছে সাকিবের, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’কিংবা অভিমান থেকে কি টেস্ট ছাড়ছেন সাকিব? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘কষ্ট কিংবা অভিমান থেকে নেওয়া নয়। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়, সরে যাওয়ার জন্য এবং নতুনদের আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।’ একই প্রশ্নের উত্তরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও নিজের সরে যাওয়ার ঘোষণাটা দেন সাকিব, ‘অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি সরে যাই। আপাতত পরের যে সিরিজগুলো আছে, নপরবর্তী সময়ে দলের প্রয়োজনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরতেও পারেন সাকিব। তবে আপাতত তিনি আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না, ‘আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস–এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিকে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, দেন আমরা ডিসাইড করতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার ইচ্ছা আছে টেস্টে শেষ সিরিজ হওয়ার। মোটামুটি বলতে পারেন, আমি অন্তুত দুটি সংস্করণে আমার শেষটা দেখছিনিজের ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করতে বলা হলে সাকিব হেসে উত্তরে বললেন, ‘আমি মনে করি, আমি রিজনেবলি ওকে করেছি। আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনো অনুশোচনা ছিল না। এখনো নেই। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়, যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড—সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ক্রীড়া পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাকিব ছোটবেলা থেকে ছিলেন খেলাপাগল। তার বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে খেলেছেন ফুটবল। এমনকি তার এক স্বজন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার। তবে সাকিব বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট। মাগুরা ক্রিকেট লিগের দল ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে অনুশীলন করে পরে ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে খুলনার হয়ে খেলেন জাতীয় লিগে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে সাকিব বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালে; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। ওই বছরেই টি-টোয়েন্টিতেও জাতীয় দলের ক্যাপ পান তিনি। পরের বছরের ১৮ মে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তার।
ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ২০০৯ সালে অধিনায়কের পদ থেকে মোহাম্মদ আশরাফুলকে সরিয়ে দেয় বিসিবি। অধিনায়কত্ব পান মাশরাফী বিন মোর্তজা। আর তার ডেপুটি করা হয় সাকিবকে। পরে মাশরাফী ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব পান সাকিব। তার নেতৃত্বেই দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আইসিসির টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এবং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এর র জন্য মনোনয়ন পান তিনি। দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স সাকিবকে বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত করে।
২০০৯ সালে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন সাকিব। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এই তালিকার শীর্ষে থাকার রেকর্ড তার দখলে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১২ এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে তারা। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সাকিব ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
মাশরাফী আবারও ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব ফিরে পান সাকিব। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। পূর্ণ শক্তির টেস্ট দলের বিপক্ষে এটি প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের।
ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারালেও সাকিব-মুশফিকদের ব্যর্থতা ছিল চরমে। এতে অধিনায়কত্ব হারান সাকিব। পরে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে।
মাশরাফীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। পুরো দলের সঙ্গে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মাশরাফী অবসর নিলে দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান সাকিব। পরে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া তাকে।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সহঅধিনায়ক ছিলেন সাকিব। পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলে আট ম্যাচে ৬০৬ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করেন তিনি।
এ পর্যন্ত ৭০টি টেস্ট ম্যাচ খেলে সাকিব রান করেছেন ৪ হাজার ৬০০; উইকেট নিয়েছেন ২৪২টি। এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২৪৭টি; এই সংস্করণে তার রান ৭ হাজার ৫৭০, উইকেট শিকার করেছেন ৩১৭টি। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৪৯; রান ২ হাজার ৫৫১।
২০১৭ সালে মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। ক্রিকেটের যাবতীয় নিয়মকানুন ও নানা পরিবর্তনসহ খেলার ভালো-মন্দ নিয়ে আইসিসিকে সুপারিশ করে এই কমিটি।
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে খেলেন সাকিব। ২০১২ সালের আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সাকিব। শিরোপা জেতে তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ক্রিকইনফোর সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন তিনি।
মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন এই তারকা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে ছয় মাসের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। এ ছাড়া জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন করায় ২০১৯ সালে তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ভুল স্বীকার করার পর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন সাকিব। মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
গার্মেন্টসকর্মী রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ২২ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছন। সাকিব আল হাসানকে মামলার ২৮ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি করা হয়।
৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরের ঘোষণা দেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জানান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে খেলেই অবসরে যাবেন তিনি। এ সময় সাকিব আরও জানান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই ছিল এ সংস্করণে তার শেষ ম্যাচ। তবে ওয়ানডে খেলে যাবেন। পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসরে যাবেন তিনি।
তথ্য সূত্র – প্রথম আলো, সময়ে আলো