প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৯:০৯:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বিপুল ইসলাম আকাশ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা রেলপথ অবরোধ করে আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে গণঅবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। সেখানে যাত্রাবিরতির দাবিতে ট্রেনটি ৪ ঘন্টা ১২ মিনিট আটকে রাখেন তারা।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। চার ঘন্টা আটকে রাখার পর রেলওয়ের মহাপরিচালকের আশ্বাসে রাত ৯ টা ৪২ মিনিটে ছেড়ে দেওয়া হয়।
যাত্রাবিরতির দাবিতে ট্রেন আটক রেখে গণঅবস্থানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলমসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে ছাত্র-জনতার দাবি-দফা শুনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ মার্চ বুড়িমারী-ঢাকা রুটে চলাললের জন্য আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে সকল সম্ভাবতা যাচাই করে বাংলাদেশ রেলমন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত ৭ ডিসেম্বর একটি নির্দেশনার জারি করা হয়। তাতে যাত্রাবিরতি স্টেশনসমূহের তালিকায় বামনডাঙ্গা স্টেশনের নাম থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ নতুন ট্রেনকে বরণ করার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো এক অদৃশ্য কারণে ১২ মার্চ যখন ট্রেনটির উদ্বোধন করা হয় তখন বামনডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রাবিরতি প্রদান করেনি।
তারা আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী পীরগাছা, মিঠাপুকুর, সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার জনসাধারণের সাথে সারাদেশের রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯০৫ সালে বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন স্থাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট, ঢাকা- পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী সকল আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন বামনডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে এবং সড়ক ও নৌ যোগাযোগ উন্নত না থাকায় এ বৃহৎ অঞ্চলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম রুটও এ স্টেশন। বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যেখানে ‘হাসানগঞ্জ’ নামে আরোও একটি স্টেশন আছে এবং সকল মেইল ও লোকাল ট্রেনসমূহ সে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এছাড়াও সুদূর কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে গাইবান্ধা রেল স্টেশন পর্যন্ত রেলরুটের সকল ট্রেন নিয়ন্ত্রণ, মনিটরিং, রেলপাত ব্যবস্থাপনা, স্থাপনা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি কার্য সম্পাদনার জন্য বাংলাদেশ রেলের সাব-ডিভিশনাল (আই ডব্লিউ/পিডব্লউ) অফিস দুটি বামনডাঙ্গায় অবস্থিত। যেখানে প্রায় ৩ শতাধিক রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় সকল স্টেশনের মধ্যে বামনডাঙ্গা স্টেশন বার্ষিক আয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে শুধুমাত্র বামনডাঙ্গা স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা ছিল ৮৯ হাজার ৬ শত ৭৭ জন বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৭ হাজার ১’শ ৪১ টাকা এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩’শ ১৯ জন যাত্রীর বিপরীতে রাজস্ব আয় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৪শ’ ৪৬ টাকা। বামনডাঙ্গা স্টেশন থেকে সকল আন্তঃনগর ট্রেন সমূহের মোট আসন বরাদ্দ মাত্র ৭১টি। এছাড়াও বিপুল পরিমাণে যাত্রীর পর্যাপ্ত টিকেট এ স্টেশনে না থাকায় অনলাইনে, রংপুর, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়ার স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করে যাত্রীরা যাতায়াত করে থাকে যার হিসাব উল্লিখিত অংকের দ্বিগুণ। বামনডাঙ্গা স্টেশনের প্রায় ২শ বছরের ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও গত ১২ মার্চ বামনডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রাবিরতি না রেখেই ঢাকা-বুড়িমারী রুটে আন্তঃনগর ট্রেন ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ চালু হয়। উদ্বোধনের দিনই এ অঞ্চলের মানুষ গণ আন্দোলনের ডাক দিলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে এ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষ গণ-আন্দোলন থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে একাধিবার মানবন্ধন, রেল মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রী, সচিব, ডিজি, জিএম, ডিজিএম, ডিআরএম, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন/স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি ৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও বুড়িমারী এক্সপ্রেস বামনডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রবিরতি দেয়নি।