প্রতিনিধি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৯:১২:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকল্পের জন্য দেয়া টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে যুবলীগ নেতার সাথে বাকবিতণ্ডার জেরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে নিজের পিস্তল তাক করার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে। তবে এমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আত্মরক্ষায় পিস্তল বের করেছেন তিনি।
এমন ঘটনা ঘটেছে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের বারান্দায়।
এদিন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা চলছিল। এ সভায় এসেই এমন কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে এমপি রেজাউল করিম বাবলু গোলবাগীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পরপরই এমপি উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করেন।
এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া যুবলীগ নেতার নাম আলমগীর বাদশা। তিনি শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
আলমগীর বাদশা বলেন, ‘২০১৯ সালে এমপির নামে মসজিদ, রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ আসে। ওই সময় অনেকের কাছে থেকে বরাদ্দ দেয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন এমপি। আমার কাছে থেকেও তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেন। কিন্তু সেই বরাদ্দ আজও দিতে পারেননি এমপি রেজাউল করিম। আমার দেয়া টাকাও ফেরত দেননি।’
বাদশা অভিযোগ করেন, ‘অতীতেও টাকা ফেরতের বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি দিবেন বলে এড়িয়ে যেতেন। আজ সামনাসামনি দেখা হতে তাকে বললাম, আপনি যে টাকাটা নিলেন, ফেরত দিবেন না? এ কথা বলার পরেই তিনি আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। বলেন কিসের টাকা, কোনো টাকা নেই।’
যুবলীগ নেতার দাবি, ‘এ সময় আমাকে ধাক্কা মারতে থাকেন এমপি। ফারুক নামে তার এক সঙ্গী লাঠি দিয়ে আঘাত করে আমাকে। আমাকে বাঁচাতে গেলে আরেকজনের মাথায় বারি মারে ফারুক। ওই সময় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং চলছিল। হট্টগোল শুনে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু বের হয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। কিন্তু কোনো কথা না বলে এমপি পিস্তল বের করে তার দিকে তাক করে।’
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, সকাল দশটার দিকে এমপি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অংশ নিতে আসেন। এ সময় আলমগীর বাদশা তার কাছে গিয়ে প্রকল্পের জন্য দেয়া টাকার প্রসঙ্গ তোলেন। এ নিয়ে দু পক্ষেই উত্তেজনামূলক কথা চলছিল। এক পর্যায়ে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
এ সময় বাদশাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন ফারুক। সেটি ঠেকাতে গিয়ে শহিদুল নামে একজনের মাথায় আঘাত পান। হামলায় এমপির সহকারীর মাথায়ও লাঠির আঘাত লাগে।
ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা শ্রমিক লীগের এক নেতা শহিদুল ইসলাম জানান, বাদশার পাশে দাঁড়ালে এমপির সাথে থাকা ফারুক পিছন থেকে এসে লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এখনও মাথায় ফুলে আছে। ওই ফারুক এমপির ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা করে, গরু চুরি করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান এগিয়ে আসলে এমপি পিস্তল বের করে দেখায়।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা হচ্ছিল। বাইরে হট্টগোল শুনে বের হই। শুনতে পাই চার বছর আগের প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা নিয়ে কথাকাটাকাটি হচ্ছে। আমি তাকে বললাম এমপি সাহেব আপনি বসে সমাধান করা ভালো। আপনি সিনিয়র মানুষ, এভাবে যুবলীগ সেক্রেটারির সঙ্গে বাইরে কথা বলার দরকার নেই।’
‘তিনি কী বুঝলেন, হঠাৎ করে পিস্তল বের করে আমার পায়ের দিকে তাক করে। এ সময় সেখানে পুলিশ, উপজেলা সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, এমপি সাহেব এর আগে কখনও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির কোনো সভায় আসেননি। আজ কি মনে করে এসেছেন, জানি না। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কিছুক্ষণ পর চলে যান এমপি। আর তার বিরুদ্ধে অনেক প্রকল্প নিয়ে নয়ছয় করার ঘটনা আছে। এসবের সঠিকভাবে তদন্ত করা দরকার।
তবে এসব ঘটনার বিষয়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) রেজাউল করিম বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিতে উপজেলা পরিষদে যাওয়া হয়। এ সময় সেখানে আলমগীর বাদশা এমপি মহোদয়কে দেখেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার সাথে আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিল। এক পর্যায়ে তারা এমপির ওপর হামলা করে। আমি সামনে থাকায় আমার মাথায় আঘাত লাগে।
উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে পিস্তল তাক করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। পিএ বলেন, চেয়ারম্যানও হামলা করতে এসেছিলেন। এমপি তখন নিজের আত্মরক্ষায় পিস্তল বের করেন। পিস্তল তো নেয়া হয়েছে আত্মরক্ষার জন্য।
হট্টগোলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, আজ উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা চলছে। এ সময় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে বাইরে ঝামেলা হয়েছে।
পিস্তলের নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিশ্চিত হয়ে বলতে হবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
তবে বগুড়া জেলা প্রশাসনের জেএম শাখা এমপি বাবলুর নামে একটি পিস্তল নিবন্ধনের বিষয় নিশ্চিত করেছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল করে। উপজেলা পরিষদ থেকে বের হয়ে মিছিলটি মাঝিড়া বটতলায় শেষ হয়। সেখানে সম্পাদক তালেবুল ইসলাম তালেবের নেতৃত্বে সমাবেশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালে পিস্তল হাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন রেজাউল করিম বাবলু।