প্রতিনিধি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৮:২৫:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুল জব্বার : পাবনা দেশের সর্ববৃহত্ত পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা। এ জেলার বেশির ভাগ পেঁয়াজ বিক্রি হয় কাশিনাথপুরে। এ হাট চারটি থানার কেন্দ্রস্থল। আজ বৃহস্পতিবার হাটে পেয়াজ বিক্রি হয় বড় পেয়াজ সর্বোচ্চ ৪ হাজার, ছোট পেঁয়াজ ৫৫০০ বিক্রি হয় যেখানে গত মঙ্গলবার বেড়াহাটে পেঁয়াজ হাজার টাকা বেশি ছিলো এতে মাথায় হাট পেয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষকদের।
পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার বিল গাজনা পাড়, বিল গ্যারকা পাড়, কুমিরগাড়ী, বামনডাঙ্গা, বামনদি, ইসলামপুর প্রভৃতি মাঠে গিয়ে দেখা যায় চাষিরা পেয়াজ চাষ করে।
সুজানগর উপজেলার বামনদি গ্রামের পেঁয়াজচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ হলো মসলা ফসল। অথচ তারা মসলার বাজার অনুযায়ী দাম এখন পাচ্ছেন না একদিনের ব্যবধানে দাম এতটা কমে গেলে আসলে অনেকটা বিধ্বস্ত আমরা।
ঢাকা পেঁয়াজ সরবরাহ কারী ব্যপারি আওয়াল মোল্লা যানান ভারত থেকে পেয়াজ আমদানি করার কারণে এমন অবস্থা। পেঁয়াজের বাজার বাড়বে কিনা বলা যাচ্ছে না। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ না আসলে দাম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন তিনি।
সুজানগর উপজেলার চাষি জসীম উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ আবাদে খরচই পড়ে যায় এক হাজার ২০০ টাকা মণ। মৌসুমের শেষে ওজন অর্ধেক কমে যায়, অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। আবার বেশিরভাগ চাষি বছরের শেষ পর্যন্ত ঘরে পেঁয়াজ রাখতেও পারেন না, দেনার কারণে অগেই বিক্রি করে ফেলতে হয়। তাই মৌসুমে ভালো দাম থাকলে সব চাষি উপকৃত হবেন।
সাঁথিয়া উপজেলার পেঁয়াজচাষি মনোয়ার জানান, এখন পেঁয়াজ চাষে অনেক খরচ। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন। নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে বাজার উঠলে দাম কমে যায়।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ও পাবনা জেলার বিশিষ্ট চাষি সিদ্দিকুর রহমান জানান, পেঁয়াজ চাষ করে চাষিরা ক্ষতির শিকার হওয়ায় আবাদ কমে যাচ্ছে। পেঁয়াজ চাষে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও সাধারণ চাষিরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না। অনেকেই চড়া সুদে মহাজনি ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যান্য ফসলের মতো পেঁয়াজের উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাত সম্প্রসারণ করা দরকার বলেও তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, এবার আবহাওয়া ভালো। কৃষির মাঠকর্মীরা চাষিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। চাষিরা ন্যায্য দাম পাবেন বলে তারা আশাবাদী।এবার মৌসুমের শেষের দিকে এসে দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। পাবনায় মূলকাটা পেঁয়াজ চাষ গত বছরের তুলনায় ১২০ হেক্টর বা প্রায় এক হাজার বিঘা বেড়েছে। প্রায় প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেঁয়াজ চাষে মুখ ফিরিয়ে নেয়া চাষিরা আবার পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকছেন। চাষিরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শেষে অনেক দাম বাড়লেও সব চাষি সেই লাভ পান না। এজন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভরা মৌসুমে তাদের কিছুটা লাভ যেন নিশ্চিত করা হয়।
পাবনার পেঁয়াজপ্রধান এলাকা সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক চাষি কিছুদিনের মধ্যে এখন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ লাগানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আবার চারা বা হালি পদ্ধতিতে চাষের জন্য চাষিরা জমিতে বীজ বপন বা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আর হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ জানুয়ারি মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাসে।কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। আর পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদিত হয় প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টন।