• সারাদেশ

    পাবনার চাটমোহরে থাপ্পর মেরে শিক্ষার্থীর কপাল ফাটালেন শিক্ষিকা

      প্রতিনিধি ২৮ জুন ২০২২ , ৬:৫৫:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    কায়সার আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

    পাবনার চাটমোহরে থাপ্পরে মেরে শুভ হোসেন (১১) নামে চতুর্থ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর কপাল ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে সহকারি শিক্ষিকা তৌহিদা পারভীনের বিরুদ্ধে।

     

    রবিবার ২৬ জুন দুপুরে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

     

    সোমবার ২৭ জুন মৌখিক অভিযোগে জানতে পেরে ইউএনও ঘটনা খতিয়ে দেখতে সহকারি শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন।

     

    আহত শুভ চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

     

    অভিযোগে জানা গেছে, রবিবার দুপুরে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে ছুটি দেয়ার পর দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সহকারি শিক্ষিকা তৌহিদা পারভীন। শিক্ষার্থীরা বের হতে ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকতে গিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ সময় পেছন থেকে শিক্ষার্থীদের ধাক্কায় শুভ হোসেন সামনে ছুটে গিয়ে সহকারি শিক্ষিকা তৌহিদা পারভীনের শরীরের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে চরম ক্ষুব্ধ ওই সহকারি শিক্ষিকা শুভকে থাপ্পর মারেন ও ঘার ধরে ধাক্কা দিলে স্টিলের দরজার চৌকাঠের ওপর পড়ে কপাল ফেটে যায় শুভ’র।

     

    পরে তাকে অন্যান্য শিক্ষকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। ক্লাস করতে না পেরে শুভ ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মাকে ঘটনা খুলে বলে।

     

    এ ঘটনার পরে শুভর বাবাসহ আত্মীয় স্বজন স্কুলে গিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করেন। স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে সোমবার সকালে স্কুলে এ বিষয়ে উভয়পক্ষের বৈঠক হবার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে জড়িত শিক্ষিকার বিচার চেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে বৈঠক ভেস্তে যায়।

     

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি মৌখিকভাবে জানতে পেরে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে স্কুলে গিয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

     

    আহত শিক্ষার্থী শুভ জানায়, স্কুল ছুটির সময় আমরা ক্লাস রুমে ঢুকতে যাই। এ সময় পেছন থেকে অন্যদের ধাক্কা লেগে সেখানে দাঁড়ানো তৌহিদা ম্যাডামের শরীরে আমার ধাক্কা লাগে। তখন তিনি ঘুরে উঠে আমাকে থাপ্পর মারেন এবং ঘাড় ধরে ধাক্কা দিলে লোহার দরজার চৌকাঠের উপর আমার মাথা লেগে কপাল ফেটে যায়। পরে শরীর খারাপ লাগায় ক্লাস করতে না পেরে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যাই। ব্যথার যন্ত্রণায় সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি।

     

    শুভর পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আমার সন্তানের উপর এমন অত্যাচারের বিচার চাই। সোমবার স্কুলে বসে এ ঘটনার বিচার করার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করে নাই। তাই আমি ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানাইছি। একজন শিক্ষিকা হয়ে এভাবে মারতে পারেন না। তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া দরকার। তাহলে অন্য শিক্ষকরা এমন করতে সাহস পাবেন না।

     

    অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা তৌহিদা পারভীন বলেন, শুভকে মারা বা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে ছুটি দিলে এক দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় হুড়োহুড়ি হয়। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের শৃঙ্খলভাবে বের হতে বলছিলাম। কিন্তু তারপরও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকতে গেলে তারা ধাক্কাধাক্কি করে আমার উপর এসে পড়ে। এ সময় আমি দরজার উপর পড়ে যাই। আর শুভ চৌকাঠের উপর পড়ে কপাল ফেটে যায়। তারপরও অভিভাবকরা স্কুলে আসার পর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তারা শোনেননি।

     

    সহকারি শিক্ষক আব্দুল আলীম তার সহকর্মী তৌহিদা পারভীনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, অভিভাবক স্বজন যারা এসেছিলেন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তাদের সাথে কথা বলে সবকিছু প্রায় মিটেও গিয়েছিল। আমরা শিক্ষকরা তো ইচ্ছে করে কোনো শিক্ষার্থীদের মারধর করি না। এটা শুধু ভুল বুঝাবুঝি মাত্র।

     

    তবে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইম, নাইস, রিয়াদ, সুমাইয়া, তামান্না, মরিয়ম জানায়, ওই সময় তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে ঢোকার সময় পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে শুভ ছুটে গিয়ে তৌহিদা ম্যাডামের শরীরে ধাক্কা লাগে। তখনই ম্যাডাম শুভকে থাপ্পর মারে ও গলা ধরে ধাক্কা দেয়। দরজার চৌকাঠের সাথে লেগে কপাল ফেটে যায় শুভ’র।

     

    সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে ঘটনা খতিয়ে দেখছি। সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন করে সবার বক্তব্য ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন পেশ করবো। প্রকৃত ঘটনা যেটি সেই আলোকে প্রতিবেদন দেয়া হবে।

     

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, ঘটনা জানার পরই আমি সহকারি শিক্ষা অফিসারকে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি প্রতিবেদন দেবার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাবো। সেখানে যদি ওই শিক্ষিকা দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ