প্রতিনিধি ১৭ অক্টোবর ২০২২ , ৯:১৭:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
রবিউল ইসলাম জবি প্রতিনিধিঃ
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে পরিবেশ দূষণ। বায়ু দূষণ, বন-জঙ্গল ধ্বংস ও অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। ফলে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে পুরো পৃথিবী৷ ইতোমধ্যে এই সমস্যাগুলো বাংলাদেশেও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বের মারাত্মক পরিবেশ দূষণ, দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখে পরিবেশ দূষণের উপর কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ লোকমান হোসেন। যদিও তিনি চীন এর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনথেটিক কেমিস্ট্রি তে ২০১৪ সালে পিএইচডি গবেষণা শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান সহ ৮ (আট) সদস্যের একটি গ্রুপ বায়ু দূষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বায়ু দূষণ, বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের পরিমাণ এবং কারণসমূহ জানার জন্য এ গ্রুপ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের ছাদে ২০১৮ সালে একটি স্যাম্পলিং স্টেশন স্থাপন করেন। এই স্যাম্পলিং স্টেশনের মাধ্যমে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ঢাকার বাতাসে মিশে থাকা বিভিন্ন উপাদানের নমুনা সংগ্রহ করেন। সেই নমুনা বিশ্লেষণ করে অ্যালকেন, হোপেন, স্টেরেনসহ প্রায় ৩০ ধরনের জৈব দূষকের অস্তিত্ব পান।
তাদের ধারণামতে, বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কয়লা ইন্ডাস্ট্রি, হোপেনস, স্টেরেনস ও বিভিন্ন ধরনের অ্যালকেন উৎপাদনের জন্য দ্বায়ী। পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্রিক ফিল্ড ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ নানাবিধ উৎস এসব জৈব দূষক উৎপাদন করছে।
এছাড়া শীতকালে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমশীতল বাতাস ভারতের উত্তরাঞ্চল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ তাই শীতকালের বাতাসে এ ধরণের জৈব দূষকের অস্তিত্ব বেশি দেখা যায়।
তাদের গবেষণামতে, এসব দূষক ঢাকার আকাশে এত পরিমাণে মিশে আছে যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় কয়েক গুণ বেশি; যা এই গবেষক দলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব উপাদানের অস্বাভাবিক মাত্রা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে; যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ব্যাপকভাবে দ্বায়ী৷
তারা বলেন, এসব ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জন সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে সৌর, পারমাণবিক ও জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে হবে৷ যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে স্বল্প সময় ও কম খরচে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আবার, জলবিদ্যুৎ একটি পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প। সেখানে নিয়োজিত কর্মীদের নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে; যা অনেক ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে বিশ্বনেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ লোকমান হোসেন সহ গ্রুপের অপর চারজন সদস্য ‘লং টার্ম ট্রেন্ডস ইন অ্যারোসল অপ্টিক্যাল প্রোপার্টিজ এন্ড দেয়ার রিলেশনশিপ উইথ ক্লাউড প্রোপার্টিজ ওভার সাউদার্ন ইন্ডিয়া এন্ড শ্রীলঙ্কা’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্লাইমাটোলজি’ নামক জার্নালে (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর = ৪.০৬) প্রকাশ করেন।