• সারাদেশ

    নিভৃত পল্লীতে নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াল থাবা ; সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তরুণদের মাদক উৎসব

      প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২২ , ৬:২৬:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

     

     

    সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জঃ

     

    হযরত মখদুম শাহ দৌলা (র.) এর পূণ্যভূমি এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিল্প সাহিত্যের উর্বর অঞ্চল এই শাহজাদপুর। যমুনা, করতোয়া, হুরাসাগর ও বড়াল নদীর পলল ভূমিতে ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ ৩৪৩ টি গ্রাম নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। সেইসাথে তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এই উপজেলাতে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম কাপড়ের হাট, প্রথম সারির একটি নৌ-বন্দর, বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটাসহ বিস্তীর্ন শষ্যের মাঠ। সম্প্রতি এখানে কবি গুরুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ও। এছাড়াও এই জনপদে রয়েছে প্রায় ৬ লাখ মানুষের বিশাল জনশক্তি। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ এবং বিশাল জনগোষ্ঠির এই এলাকাটিই এখন ভয়ঙ্কর মাদকে হাবুডুবু খাচ্ছে। শহর ছাপিয়ে নিষিদ্ধ মাদকের ভয়ংকর থাবা পৌঁছে গেছে নিভৃত পল্লীতে। একসময় গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে গিয়ে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম দিয়ে ঝেড়ে ফেলতো সকল ক্লান্তি। যারা মাত্র কয়েক বছর আগেও কেবল পানে চুন লাগিয়ে মুখের মধ্যে চালান করে দিয়ে তুলতো তৃপ্তির ঢেকুর। আজ সেইসব সরল মানুষদের কপালেই পড়েছে দুঃশ্চিন্তার ভাজ। যারা মাত্র কয়বছর আগেই জর্দা,আলাপাতা আর বিড়ি ছাড়া কিছু চোখে দেখেনি, তাদেরই চারপাশে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। গ্রামের যুবক, কিশোর থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত হাবুডুবু খাচ্ছে মাদকে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তরুণদের মাদক উৎসব। নির্জন মাঠে, নৌকায়, ঘাসের জমিতে, গাছের বাগানে এমনকি কোন কোন বাড়িতেও গভীর রাত পর্যন্ত জমায় মাদকের আসর। পল্লীর এইসব তরুণ প্রজন্মকে মাদকে ডুবে যাওয়ার কারণ হিসেবে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতাকেই দায়ী করছেন অনেকে।

    তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে কথা হয় কায়েমপুর ইউনিয়নের খারুয়াজংলা গ্রামের ১৯ বছর বয়সী এক মাদকসেবীর সাথে। পেশায় তিনি দিনমজুর। গত দুই বছর ধরে তিনি ইয়াবা সেবন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে তিনি জানান, দুই-তিনদিন পরপর দুই বন্ধু মিলে দুই পিস ইয়াবা এনে সেবন করেন। এর জন্য খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। ফোন দিলে অল্প বয়সী একটি ছেলে এসে দিয়ে যায়। তবে একেকদিন একেক জায়গা এসে দেখা করে। টাকাও খুব অল্প, মাত্র পাঁচশত টাকা দিলেই দুই পিস হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা রেখে আসতে হয়। কিছক্ষণ পর আবার সেখানে গেলেই ছোট্ট পলিথিনে মেলে ইয়াবা।

    দিনমজুরী করে এত টাকা জোগান দিতে সমস্যা হয় কিনা জিজ্ঞাস করলে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “ সমস্যা তো একটু হয়ই। তাছাড়া ঠিকমত ঘুম হয়না বলে কাজও ঠিকঠাক করা যায়না। এরজন্য প্রতিনিয়তই সংসারে ঝামেলা লেগে থাকে। তবু কিছু করার নেই। নেশা হয়ে গেছে, না খাইলেই শরির পড়ে যায়।

    এদিন ঐ এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় কয়েকজন কিশোর একটি কাঠ বাগানে গোল হয়ে বসে ধোঁয়া ছাড়ছে’ এগিয়ে যেতে দেখেই তারা উঠে হাঠা শুরু করলো। পরে পরিচয় দিয়ে একজনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলে এই ছেলেটি হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে জানায় সে শহরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। তার বাবা-মা জানলে সমস্যা হবে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, মাঝে মাঝে তারা বন্ধুরা এলাকার বড় ভাইদের সাথে মিলে গাঁজা সেবন করে। এসব মাদক এলাকাতেই পাওয়া যায় জানিয়ে সে বলে বন্ধুরা মিলে চাদা ধরে সবার টাকা একজায়গা করে কোন এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সবাই মিলে একসাথে সেবন করে।’

    এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে কয়েকজন মিলে মাদক গ্রহণ করার কয়েকটি ভিডিও। যা চলতি সপ্তাহে স্থানীয় এক সাংবাদিক পৌর শহরের দাবারিয়া গ্রামের মাঠের মধ্যে থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে। যোগাযোগ করলে স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদ হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, তার নিজ এলাকা দাবারিয়া এবং শেরখালীতে মাদকসেবীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে এই দুইটি গ্রামেই রয়েছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। গ্রামের মানুষের কাছে তা এখন ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া দিনে রাতে যে কোন সময় চাইলেই এখান থেকে মমাদকসেবীরা গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল সংগ্রহ করতে পারে। বিকেল থেকেই দলে দলে মাঠের মধ্যে গিয়ে গল্প করার ছলে গ্রহণ করে ভয়ংকর মাদক।”

    এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল! অভিনব কৌশলে এলাকায় রমরমা নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা চালিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে এলাকার প্রতাপশালী চক্র। মাঝে মধ্যে প্রশাসন দু’একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দু’চারজনকে গ্রেফতার করলেও শাহজাদপুরে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তুলনামূলক ভাবে ইয়াবা ও গাজা খুব অল্প টাকায় পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য বলে মাত্রাতিরিক্ত সেবন বাড়ছে এর।’

    এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শাহজাদপুর পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর, ইসলামপুর (রামবাড়ী), বিসিক বাসস্ট্যান্ড, দিলরূবা বাসস্ট্যান্ড, কান্দাপাড়া, শক্তিপুর, দ্বাবারিয়া, নলুয়া, বাড়াবিল, মণিরামপুর, শান্তিপুর, দরগাহপাড়াসহ উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের যদুর জোলা, কালাইবিল, চৌচিরের কাউয়াক বাথান এলাকা, রাউতারা সুইস গেট সংলগ্ন বাঁধ, চরাচিথুলিয়া, কাকিলামারি, মাদলা, নুকালী, আলোকদিয়ার, বাঘাবাড়ী উত্তর ও দক্ষিণপাড়, কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু, সড়াতৈল, কাশিনাথপুর, গাড়াদহ ইউনিয়নের মষিপুর, শরিষাকোল,তালগাছি, নরিনা, বেলতৈল, হাবিবুল্লাহনগর, কৈজুরী, জালালপুর, খুকনী, পোরজনা, গালা, রূপবাটি এমনকি যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল সোনতনী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল।

    এদিকে মাদকের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর)’ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা নবাগত ইউএনও এর

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ