প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৫০:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় শুঁটকি তৈরীর ধুম পড়েছে। ছোট বড় প্রায় শতাধিক চাতালে এ শুটকি তৈরীর কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরে প্রায় ২৪০ মেট্টিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অফিস। প্রকারভেদে ৩’শ থেকে ৭শ’ টাকা কেজি হিসেবে ১০কোটি টাকার বেশি কেনাবেচা হবে। বর্তমানে শুটকি চাতালগুলোতে কেউবা মাছ কাটছে কেউবা মাছগুলো রোদের তাপে নাড়িয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে কেউবা প্যাকেট জাত করছে। শুটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্তার কারনে শুটকি চাতালগুলো কর্মমুখর হয়ে ওঠেছে। শুটকি চাতালে কাজ করে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের মৌসুমী কর্মসংস্থান হয়েছে।
মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, প্রতিবছর শীত শুরু হবার সময় চলনবিলাঞ্চলের নদী-খাল-বিলের পানি কমে যায়। এত প্রচুর পরিমান দেশীয় মাছ ধরা পড়ে। ছোট-মাঝারী ধরনের মাছগুলোকে শুটকি ব্যবসায়ীরা কম মুল্যে কিনে চাতালে শুকিয়ে শুটকি তৈরী প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন।
সিরাজগঞ্জের তৈরী শুটকি জামালপুর, চিটাগাং ও সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন আড়তে চলে যায়। সেখান থেকে দেশের বাইরেও চলে যায়। এবছর ইতোমধ্য উল্লাপাড়ায় ১২৬টন এবং তাড়াশে প্রায় ৯৫ মেট্টিক টন শুটকি উৎপাদন হয়েছে। জানুয়ারীর শেষ পর্যন্ত শুটকি তৈরীর কার্যক্রম চলবে। এতে প্রায় ২৪০ টন শুটকি উৎপাদন হবে। তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় প্রায় ৭০-৮০জন শুটকি ব্যবসায়ী রয়েছে। ছোটবড় অন্তত শতাধিক চাতাল রয়েছে। প্রতি চাতালে অন্তত ১০-১৫জন করে নারী-পুরুষ কাজ করে, এতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।’
শুঁটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা মন দরে কেনা হয়। পরে প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুঁটকি তৈরি করা হয়। চাতালগুলোতে টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চ্যালা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুতুম, চিংড়ি, গুছি, চান্দা, বোয়াল ও শৈল মাছসহ ছোট বড় অসংখ্য মিঠাপানির দেশীয় মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরী হয়। জানুয়ারীর পর্যন্ত চলবে শুঁটকি শুকানোর কাজ।তিনি আরা জানান, সুস্বাদু হওয়ায় চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদা সারা দেশে।’
শুঁটকি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, চলনবিলে শুঁটকি তৈরির পর বাজারজাত করতে প্রায় একমাস সময় লাগে। শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয়। তারপর শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক ব্যবসায়ী চাতাল থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন শুঁটকি।’
ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, চলনবিলের তৈরী শুটকি অত্যন্ত সুস্বাদু। এখানকার তৈরী শুটকি সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, জামালপুর, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। প্রকারভেদে এখানকার শুটকি তিনশ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত কেজি ধরে বিক্রি হয়ে থাকে।,
শুটকি কাজে নিয়োজিত আয়েশা খাতুন, হাফিজা খাতুন ও খাদিজা খাতুন জানান, ভোরে উঠেই চাতালে চলে যান। শুঁটকি রোদে দিয়ে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না করে আবার যান শুঁটকি উঠিয়ে রাখতে। এ কাজে প্রতিদিনের মজুরি হিসেবে পান ২৫০ টাকা। তারা আরো জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশিত শীতের আগে-পরে প্রায় চারমাস শুটকির চাতালে কাজ করে থাকি। যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার খরচ ও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার জোগান দেয়া যায়।,
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, মাছের উৎপাদন একটু কম থাকলেও চলতি বছর ২৪০ মেট্টিক শুটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যার দাম হবে প্রায় ১০ কোটি টাকার উপরে। তিনি আরো জানান, ভালমানের এবং কেমিক্যালমুক্ত শুটকি উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। এছাড়াও শুটকি ব্যবসা প্রসারের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে শুটকী ব্যবসায়ী ও এর সাথে যেসকল শ্রমিকরা জড়িত তাদের উপকৃত হবে।