প্রতিনিধি ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৩৪:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
শহিদুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার
নওগাঁয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ বেড়েছে। সিট সংকট তাই হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতেছেন অনেকে। রবিবার (১৮ ডিসেম্বর ) সকালে নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরিজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী ও শিশু।
হাসপাতালে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে মোট সিট সংখ্যা ২২ টি কিন্তু মোট রোগী ভর্তি হয়েছে ৭০ টির অধিক যার ফলে সেবা দিতে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসক। জানা যায়,বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন, নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ১১ জন,স্কানো বা ০ থেকে ২৮ দিন বয়সের শিশু ৩-৫ জন সহ আরো অনেক নারী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
সেবা নিতে আসা এক শিশুর অভিভাবক জানান,গত রাতে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন কিন্তু আসার পড়ে সিট না পাওয়ায় ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে কষ্ট করে রাত কাটিয়েছেন।
সেবা নিতে আসা জেসমিন জানান,গতকাল থেকে হঠাৎ ডায়রিয়া শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে আসেন এবং আসার পড়ে দেখেন হাসপাতালে ব্যাপক রোগী ভর্তি যার বেশিরভাগ নারী ও শিশু। যথেষ্ট পরিমান বেড না থাকায় অতি কষ্টে রাত কেটেছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স মুর্সিদা খাতুন জানান,আমাদের ওয়ার্ডে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ৭০ জনের অধিক ও ক্রমেই বাড়ছে অথচ এই ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২ জনকে যার ফলে আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ২জন স্টাফ এর সাথে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আছেন তাদেরকে শিখাতে হয় ফলে দায়িত্ব আরো বেড়ে গিয়েছে, তবে আরো কয়েকজন নিযুক্ত করলে সেবার মান আরো বাড়বে।
হাসপাতালের গ্যারেজে থাকা টুটুল ( ৫০) জানান,রাত বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে, আমি নিজ চোখে দেখছি ডায়রিয়ার ভয়াবহ অবস্থা। অনেকে গভীর রাতেও এসে ভর্তি হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডাক্তার মোঃ লুৎফর রহমান ( সহকারী অধ্যাপক,শিশু বিভাগ) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান,বর্তমানে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে, বিশেষ করে শীতের সময় প্রকোপ বেড়ে যায় তার অন্যতম কারন ডায়রিয়ার জীবানু রোটা ভাইরাস শীতকালীন সময়ে বংশবৃদ্ধি করে। তিনি আরো বলেন,শীতের সময় টিউবওয়েলের পানি শুকিয়ে যায় যার ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে
নদীনালা,খালবিল,পুকুরের পানি ব্যবহার করে ও থালাবাসন ধৌত করে আর তখন ডায়রিয়ার জীবানু ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ শীত আসার ফলে হাত ধোয়ার অভ্যাস কমিয়ে ফেলেছে বিশেষ করে টয়লেট থেকে বের হয়ে অনেকে হাত ধৌত করছেন না যার ফলে দ্রুত ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরো জানান,নিউমোনিয়া হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটিও একটি ভাইরাস যা হাতের মাধ্যমেও ছড়ায়, এতি প্রতিরোধ করলে হলে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। প্রতিবেশীর কারো হাঁচি-কাশি হলে তার সংস্পর্শে না যাওয়া।
সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, খাবার খাওয়ার আগে এবং মল ত্যাগের পড়ে সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করলে ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। যাদের ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া হয়েছে তাদের উচিৎ ঘন ঘন তরল খাবার খাওয়া ও গরম কাপড় পরিধান করা। আবার রোটা ভাইরাস এর টিকা ২ টি দিলেও সুস্থ থাকা যায় শিশুর বয়স ৬ মাসের আগেই এ টিকা দিতে হয়।
বেড ও নার্স সংকটে কথা তিনি বলেন,রোগিদের তুলনায় নার্স এর সংখ্যা খুবই কম যার ফলে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্বরত নার্সগুলো। রোগীদের কাঙ্খিত মানের সেবা দিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসক ও নার্স বৃদ্ধি করা জরুরী।