প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৩ , ৮:৪৩:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
শহিদুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ট্রেনের যাত্রীদের চিরকুট দিচ্ছিলো সুমাইয়া। সেখানে লেখা ছিল সে পরিবারের বড় সন্তান তার ছোট আরোও দুইটা বোন আছে এবং সাহায্য করতে।
এভাবে দেখছিলাম কিছুক্ষণ তারপর সে আমার কাছে এলো তবে প্রশ্ন করার সময় পেলাম না ততক্ষনে ট্রেন আমার গন্তব্যে পৌঁছেছে বলে।
আমি স্টেশন থেকে নামলাম বাড়ির দিকে যাবো বলে হঠাৎ করে দেখি সে স্টেশনে তার বোনদের সাথে ঘুরাঘুরি করছে। আমি সাথে সাথে ছুটে গেলাম তার কাছে। প্রশ্ন করলাম, নাম কি তোমার? সে বললো, সুমাইয়া। আমি বললাম থাকো কোথায়? বাবা কি করেন? পরিবারে কে কে আছে? সে বললো,বাবা নেই, মা মানুষের বাসায় কাজ করে, থাকি স্টেশনেই।আমরা তিন বোন, আমিই বড় তাই এভাবে মানুষের কাছে হাত পাতি।
আমি বললাম আচ্ছা সুমাইয়া তোমার কি কিছু খেতে মন চাচ্ছে? সুমাইয়া বললো তেমন কিছু না। আমি আরো জোরালো ভাবে বললাম আরে বলো কি খেতে চাও? সে কেমন জানি ভয়ে ভয়ে আছে। বিষন্নতা কাজ করছে চেহারায়, হয়তো কেউ বলেনি এমনভাবে। আমি ভেবেছি হয়তো টাকা চাইবে। আমি নিয়ত করেছিলাম টাকা চাইলে টাকাই দিব। কিছুক্ষণ পড়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হলো সুমাইয়া বলো কি চাও? সে বললো আমি জুস খাবো। তারপর বললো একটু অপেক্ষা করেন আমি আমার ছোট বোনদের ডেকে আনি। পাশেই ঘুরাঘুরি করছিল তারা। ডেকে এনে তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসলো, তাদেরকে দোকানে নিয়ে গেলাম এরপর বললাম তোমার কে কি খেতে চাও? সবাই আমার দিকে আবারো অবাক দৃষ্টিতে তাকালো, হয়তো এটাই তাদের প্রথম শোনা বাক্য ছিল এর আগে এমনটা ঘটেনি। আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে তারপর দোকানে কাচের মধ্যে থাকা জুসের বোতলের দিকে ইশারা করে বললো: জুস খাবো। আমি দোকানীকে বললাম,দেন। একে একে দুইজন দুইটা জুসের বোতল নিয়ে স্টেশনে আবার দৌড় শুরু করলো। হয়তো আনন্দে। এরপর সুমাইয়াকে বললাম এবার তোমার পালা,যা খুশি নিতে পারো। সুমাইয়া তার খুশিমতো স্পিড নিলো একটি। আমি বার বার নাম্বার চাইলাম তার পরিবারের যে কোনো কারোর কিন্তু,সে দিতে পারলো না। তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম, বললাম আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ভালো থেকো সুমাইয়া। আমি সামনে পা বাড়ালাম সেও চলে গেলো অন্যদিকে। মেয়েটার নিষ্পাপ হাসিটাকে এখনো ভীষণ মিস করি। ভালো থাকুক পৃথিবীর অসহায় এই সুমাইয়ারা।