প্রতিনিধি ২ জুলাই ২০২৩ , ৬:৩৪:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
উওরবঙ্গের রাজশাহী বিভাগের একটি বৃহৎ ও প্রাচীন জেলা হলো পাবনা। ভৌগোলিক ভাবে এই জেলার দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে পদ্মা ও যমুনা নদী প্রবাহিত ও দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে এই জেলায় একাধিক নদী ও খাল বিল বিস্তৃত হয়ে আছে।পাক-ভারত উপ-মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রদেশ ‘‘বঙ্গদেশ’’ এর দিকে দৃষ্টিপাত করলে এই বঙ্গদেশ জনপদে বিভক্ত ছিল,বর্তমান পাবনা জেলা ছিল পুন্ড্র জনপদে বিভক্ত।১৮২৮ সালের পূর্বে পাবনা রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।পরবর্তী ১৮২৮ সালে রাজশাহী জেলার বিভক্ত হয়ে পাবনা জেলার সৃষ্টি হয় ও ১৯৮৪ সালে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ ২টি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।
বর্তমান ৯ টি উপজেলা, ৭৪ টি ইউনিয়ন এবং ১৫৪৯ গ্রাম নিয়ে এই জেলা গঠিত।এই জেলার সড়ক,রেলপথ,নৌপথ এবং বিমান পথের যোগাযোগ ব্যবস্হা অনেক উন্নত।পাবনার উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে পদ্মা ,যমুনা, ইছামতি,বড়াল অন্যতম। পাবনা হলো একমাএ জেলা যা পদ্মা ও যমুনা একই সাথে বিরাজমান।যুগে যুগে এই “বঙ্গদেশ” জনপদে অনেক হিন্দু-মুসলিম পেশার মানুষ বানিজ্য করতে এসেছেন এবং সেই মেধাসম্পদ গুলো এই জেলার মধ্যে বিস্তৃত হয়ে আছে যা Geographical Indication(GI) স্বীকৃতি পণ্য হিসাবে আমাদের সাহায্য করবে।
কৃষিতে (GI) সম্ভাবনা পণ্য……..…
পাবনা জেলার জমি মৃওিকার প্রকৃতি ভেদে তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে চর,ভড় এবং বরিণ।বর্ষা মৌসুম শেষে পদ্মা যমুনায় বেলে-দোআঁশ মাটির বিশাল চর জেগে ওঠে,বিলের নিম্নভূমিকে ভড় এবং উচ্চভূমিকে বরিণ বলে এবং এই জেলাতে প্রাচীন কাল থেকেই এই সকল মৃওিকা অঞ্চলে কৃষির আবাদ হয়ে আসছে। পাবনা জেলা একটি উর্বরতা কৃষি নির্ভর জেলা।
একসময় পাবনাবাসীর জন্য পদ্মা যমুনা ছিল দুঃখের কারন এখন সেই নদীর চরে কৃষি ফসল চাষ করে তারা তাদের অভাব অনটন দূর করছে এবং পাবনাতে ৬০ টির মত ছোট বড় চর আছে।পদ্মা ও যমুনা নদীর সম্ভাবনাময় চরের কৃষি ও গোখামার পাল্টে দিতে পারে এই জেলার অর্থনীতি।এই জেলার আবাদি ফসল অধিকাংশ দো-ফসলি অর্থাৎ এই জমিতে বছরে দুইবার ফসল জন্মে ও এক ফসলি জমি কম। বাদাম,মিষ্টি আলু,পেঁয়াজ সহ চরের বেলে ও দোআঁশ মাটিতে ডাল শস্য ফসল (মাসকলাই,খেসারি ও মটর), তেল শস্য (তিল, রাই ও সরিষা), ধান শস্য( আউস, আমন, বোরো), গম,যব ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। সাধারণত আউশ, আমন, বোরো, জলি, ভূরা এবং কাউন ইত্যাদি শস্য বেশি উৎপাদিত হয়।
এছাড়াও পাবনা জেলার সাঁথিয়া,বেড়া এবং সুজানগরে চর ও বরিণ জমিতে মসলা জাতীয় পণ্য ধনিয়া, কৃষ্ণজিরা, পিয়াঁজ, রসুন, লঙ্কা আবাদ হয়। হলুদ গাজনারবিলে এবং সাঁতবাড়িয়া ইউনিয়নে কৃষ্ণজিরার আবাদ হয়।
চৈএ বৈশাখ মাসে যে জমিতে ধান ও পাট আবাদ করা হয় ভাদ্র আশ্বিন মাসে সেই ধান ও পাট কেটে কালাই,মটর ও সরিষা আবাদ করা হয়।
দুগ্ধজাত (GI) সম্ভাবনা পণ্য………………
পাবনায় দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য যেমন ছানা ও ঘিয়ের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন।ঘি উৎপাদনে পাবনার খ্যাতি অর্জন করার মূল কারন হলো সাঁথিয়া,ফরিদপুর এবং আটঘরিয়া উপজেলায় দুধের সহজলভ্যতা।এবং হিন্দু বাঙালি ঘোষ বা গোয়ালারা এই দুধ দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করেন এখনও এর প্রচলন আছে।দেশের বড় বড় কোম্পানির দুধের চাহিদা পূরন হয় এখান থেকে।এখানে ঘি উৎপাদনে বানিজ্যিক ভাবে আরও অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে সেই প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় ও বাঙালির বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার হয়ে আসছে এই ঘি।
এই দুধে তৈরি ঘি,প্যারা সন্দেশ, রসকদম, কাটারিভোগ ও ঘোল ইত্যাদি পাবনার অনেক পুরনো ঐতিহ্য এবং স্বাদে , গন্ধে অতুলনীয়।
চলনবিলের মৎস্য (GI) সম্ভাবনা………..
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রূপবদলের একটি ভিন্ন জগৎ ও জলাভূমি অঞ্চল হলো চলন বিল।
কথিত আছে দুই হাজার বছর আগেও চলনবিলের এই অঞ্চল ছিল তখন সমুদ্রগর্ভে এবং কালের আবর্তে সমুদ্র চলে যায় আরও দক্ষিণে এবং সেই সমুদ্রের স্মৃতি ধরে রেখেছে চলনবিল।চলন বিল মূলত ছোট ছোট বিলের সমষ্টি এর মধ্যে বড় আকারের বিল গুলো পাবনা জেলার মধ্যে অবস্থিত। গজনা বিল, বড়বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল। বিলময় অঞ্চলের বরিন জমিতে শ্রাবন ও ভাদ্র মাসে রোপা ও রোয়া ধান এবং বিশেষ এক ফসল আমন ধানের আবাদ হয়।
চলনবিলকে এক সময় বলা হতো মাছেদের বাড়ি।দেশী প্রজাতির মাছে এই বিল ভরপুর। এই বিলের মাছ ট্রেনযোগে যেত ভারতের পশিচমবঙ্গে।এখনও তেমন না থাকলেও বহু প্রজাতির মাছ আছে এই বিলে। রুই, চিতল, কাতলা, বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, শোল, টাকি,বাইম, পাবদা, ট্যাংরা, পুঁটি, টাটকিনি এবং চাঁদা উল্লখযোগ্য। এই চলনবিল যেন জেলেদের একটি বিনোদনের কর্মসংস্থান।
উৎপাদন শিল্পে (GI) সম্ভাবনা ………….
পাবনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। কালের চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এ জেলার জনপদ।পাবনা জেলা অনেক পুরনো কাল থেকে শিল্প ও বানিজ্য হিসাবে অনেক জেলা থেকে এগিয়ে আছে। বিশেষ করে এই জেলা বস্ত্রবয়ন ও হোসিয়ারি শিল্পে অতি প্রাচিন ও প্রসিদ্ধ।এই জেলার প্রতিটি উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে বস্ত্র বয়নকারী হিন্দু মুসলিম উভয় জাতির বসবাস পূর্বাপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত লুঙ্গি,শাড়ি এবং গামছা তৈরি হয়। বর্তমান সময় এই লুঙ্গি তৈরির প্রচলন এখনও টিকে আছে। পাবনার তাঁতের শাড়ি বর্তমান উৎপাদন না হলেও পাবনার তাঁতের শাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো যা হয়তো জিআই স্বীকৃতি পেলে আবারও বাজার বিস্তৃত হবে পাবনার তাঁতের শাড়ির নামে।এখানে বস্ত্রবয়নের কাঁচামালের চাহিদা পূরন করতে কোম্পানি আমলে রেশম আমদানি হতো হিন্দুস্থান থেকে।এই জেলাতে সরিষার তেল প্রস্ততকারক খুলু বা ব্যপারি জাতের বসবাস আছে। এই জেলাতে আরও আছে হিন্দু মুসলমান যারা লৌহ শিল্প কর্মকারগন ও কামার তারা দা,কুঠার ও পাতাম লৌহাদি তৈরি করে। এখানে মৃওিকা শিল্পজীবি কুমার জাতি বসবাস করে যারা হাড়ি,পাতিল এবং নানান রকম খেলনা তৈরি করে।এছাড়াও পাট,ইক্ষু এবং কাগজ শিল্প পাবনা জেলার অনেক পুরনো ও ঐতিহ্যের শিল্প।
মাটি, পানি, জলবায়ু, ভৌগোলিক এবং পণ্যর বিশেষত্বের বিবেচনায় এই জেলার ৮/১০ পণ্যর অধিক ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি বা পণ্যর সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।এই ভৌগোলিক নির্দেশক সম্ভাবনাময় দেশীয় উৎপাদিত পণ্য নিয়