• আরো

    বেড়ায় আলো ছড়াচ্ছে তিন চাকার পথ পাঠাগার

      প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪:১৯:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    বেড়া-সাঁথিয়া প্রতিনিধি:

     

    পাবনায় আলো ছড়াচ্ছে তিন চাকার পথ পাঠাগার। পাবনার বেড়া উপজেলা শিক্ষার্থী সংগঠনের উদ্যেগে এ পাঠাগার পরিচালিত হচ্ছে।

    একেক স্কুলে এক সপ্তাহ আলো ছড়িয়ে আরেক স্কুলে চলে যাচ্ছে একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। লক্ষ্য—বাদ যাবে না কোনো বিদ্যালয়। ১৭ আগস্ট যাত্রা করা তিন চাকার এই পাঠাগারে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ৭০০। আলো ছড়ানোর ব্যতিক্রমী এ কাজ করে চলেছে পাবনার বেড়া উপজেলার ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের একটি সংগঠন।

     

     

    পাঠাগার-সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, শিক্ষার্থী ও তরুণদের ধীরে ধীরে পরিবার, স্বজন ও বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে ভার্চুয়াল মাধ্যম। ভার্চুয়াল জগৎ থেকে পরিপূর্ণ মেধাবি বিকাশে কাজ করবে এ পাঠাগার। আরও আছে মাদকের থাবা। বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ের অনেক স্কুল-কলেজপড়ুয়াও মাদকে আসক্ত। এ ছাড়া কমে গেছে খেলাধুলা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। দেখা দিয়েছে সামাজিক অবক্ষয়। এই সংকট দূরীকরণে ও বোধ জাগ্রত করতে সবার আগে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে পড়াশোনা থাকা জরুরি। এমন তাগিদ থেকেই তারা এ পাঠাগার তৈরি করেছেন।

     

    এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলীর অর্থায়নে ও শিক্ষার্থী সংগঠনটির উদ্যোগে নির্মিত ব্যতিক্রমী ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি। এটি পরিচালনার জন্য প্রত্যেক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

    শিক্ষার্থীরা আরও জানান, স্কুলের টিফিনের সময় পাঠাগারটি খোলা হয়। টিফিনের সময় হলেই শিক্ষার্থীরা পাঠাগার থেকে পছন্দমতো বই নিয়ে পড়তে পারে। টিফিন শেষ হওয়ার আগে বইগুলো আবার ফেরত দিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগও পাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটিতে গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, ইসলামিক, শিশুতোষ, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বই রয়েছে।

     

    সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় উপজেলার আলহেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় তাদের ইচ্ছামতো বই নিয়ে দাঁড়িয়ে বা ভবনের বারান্দায় বসেই পড়ছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষর্থী ভ্রাম্যমাণ এই পাঠাগারের বই পড়ছে।

     

    আলহেরা কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা জানায়, সে এই স্কুলে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটির দায়িত্বে আছে। এই সপ্তাহে স্কুলে পাঠাগারটি থাকায় টিফিনের সময় হলে সে পাঠাগারের পর্দাটি সরিয়ে দেয়। তারপর সবাই পছন্দের বই সংগ্রহ করে পড়া শুরু করে। এতে দেখা যাচ্ছে, সবাই গল্প করে সময় নষ্ট না করে বই পড়ছে। কাজটি করে সে খুবই আনন্দ পাচ্ছে। পাঠাগারে হরেক রকমের বই রয়েছে।

     

    বেড়া গ্যালাক্সি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও সানি বলেন এর আগে পড়ার ফাঁকে অবসর সময়ে মোবাইল ব্যবহার করেছে বা বাইরে আড্ডা দিয়েছে। কিন্তু এখন পাঠাগার থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ে অনেক কিছু শিখছে। এখন আর বাইরে সময় নষ্ট করে না। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ সব ধরনের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

     

     

    শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মেহেরাব হোসেন (জিম) বলেন, ‘’গল্প হোক বইয়ের সঙ্গে’ এই স্লোগান ধারণে আমাদের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি করা। শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে পাঠাগারটি তৈরি করেছি।’

     

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ’ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি এলাকায় পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। এমন আরেকটি পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একসময় শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করত। এখন এ পাঠাগারের সুযোগে অনেক শিক্ষার্থীই বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে আলোর পথে আনতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির বিকল্প নেই।

     

    উল্লেখ্য শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন পাবনা নানা ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২ টাকায় খাদ্য বিতরণ, অসহায়দের সহযোগিতা সহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করে ইতোমধ্যে পাবনা জেলা তথা সারাদেশে সারা ফেলেছে সংগঠনটি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ