প্রতিনিধি ১২ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:৪১:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলা প্রতিনিধি:
ভোলার বাপ্তায় বিরোধীয় জমি নিয়ে আদালতে মামলা করা হলে বিজ্ঞ আদালত ওই জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। কিন্তু আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বিরোধীয় ওই জমিতে বহুতল ভবন (বাসা) নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। পুলিশ সদস্য হয়েও আইন না মেনে জোরপূর্বক ভবন নির্মাণের কাজ করায় জমির মালিক মামলার বাদী চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় রয়েছে। ভবন নির্মাণে বাঁধা দিলে বাদীকে দেওয়া হচ্ছে ভয়ভীতি ও হুমকি। ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নে মধ্যে বাপ্তা হাজিরহাট এলাকার নুরুল হক মাওলানা বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) সরজমিনে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভবন নির্মানের কাজ করার এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সরজমিনে গিয়ে ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, সদরের বাপ্তা ইউনিয়নে মধ্যে বাপ্তা হাজিরহাট এলাকার নুরুল হক মাওলানা বাড়িতে এসএ ২১২৯ খতিয়ানের ৫২ শতাংশ জমির মালিক ইসমাইল পাটোয়ারী ২৬ শতাংশ ও মোহাম্মদ হোসেন ২৬ শতাংশ। ইসলমাইল পাটোয়ারীর ওয়ারিশ আঃ মালেক, মোঃ ইউনুছ, আবুল কাশেম, মোঃ ইদ্রিস, বিবি বেগমরা ২৬ শতাংশ জমি ভোগদখলের কথা থাকলেও জোরপূর্বক ৩২ শতাংশ জমি দখলে নেয়। মোঃ হোসেনের ওয়ারিশগণ মোঃ ইকবাল হোসেন গংরা ২৬ শতাংশ জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা ২০ শতাংশ জমি দখল পায়। বাকি ৬ শতাংশ জমি আঃ মালেক গংরা জোরপূর্বক দখল করে নেয়। বেদখল ওই ৬ শতাংশ জমি বুঝিয়ে পাওয়ার জন্য জমির মালিক ইকবাল হোসেন গংরা একাধিক বার আঃ মালেক গংদের বললেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। আঃ মালেকের ছেলে নুরে আলম পুলিশের এএসআই হওয়ায় ছেলের এই ক্ষমতার অব্যবহার করে জমি মালিক ইকবাল গংরা ওই জমি কাছে গেলে তাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দেয় আঃ মালেক গংরা। আঃ মালেকের ছেলে এএসআই নুরে আলম বিরোধীয় ওই জমিতে জোরপূর্বক বহুতল ভবন (ঘর) নির্মান শুরু করেন। এক পর্যায়ে জমির মালিক ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ভোলা সদর আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। যার দেওংনং-৩৭৪/২৩। বিরোধীও ওই জমিতে সকল ধরণের কার্যক্রম স্থিতি রাখার জন্য বিজ্ঞ আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু পুলিশের এএসআই নুরে আলম ও তার পরিবার আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। এতে ইকবাল হোসেন গংরা বাঁধা দিলে তাদেরকে অকর্ত্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। আঃ মালেক ও নুরে আলম গংদের ভয়ভীতি ও হুমকিতে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে জমির মালিক ইকবাল গংরা। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে ইকবাল হোসেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে এএসআই নুরে আলম নির্মাণাধীন ঘরের সাথে ফজলুর রহমানের জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। বিষয়টি নিয়ে ফজলুর রহমান ও নুরে আলমের মধ্যে একাধিকবার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানালে তারা দুই পক্ষের কাগজপত্র দেখে শালিংস মিমাংসার মাধ্যমে জমির মালিক ফজলুর রহমান গংদের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু নুরে আলম গংরা শালিসদারদের এই রায় না মেনে ফজলুর রহমানের ওই জমি জোরপূর্বক দখলে রাখেন। এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ভোলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার নং-এমপি২৮৬/২২। ওই মামলায় আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসকে নির্দেশ দিলে পৌর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরজমিনে তদন্ত করে জমির মালিক ফজলুর রহমান গংদের পক্ষে রিপোর্ট দেন। কিন্তু কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না আঃ মালিক ও নুরে আলম গংরা।
এ ব্যাপারে এএসআই নুরে আলম এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি মামলা মোকদ্দমা দেখি না। এগুলো আমার ভাই দেখে। সে ঢাকায় থাকায় আসতে পারে নাই। তাই মামলার জবাব দেওয়া হয়নি। আমি দুই মাস হয়েছে কর্মস্থলে আছি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা মানতে আছি, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করা হচ্ছে না। কাজ চলমান আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য কেউ কাজ করছে না, হয়তো ইট, খোয়া এদিক সেদিক থাকায় সেগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে।
এই বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির বলেন, এই জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ইতিপূর্বের একটি মামলায় এএসআই নুরে আলম গংদের পক্ষে রায় হয়েছে। তবে বর্তমানে বিজ্ঞ আদালত যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটিও মানতে হবে। বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কোন সুযোগ নেই।