প্রতিনিধি ১৯ অক্টোবর ২০২২ , ১১:০০:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
রাশেদ আনিস
মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে ঢাকার পথে পথে ঘুরছেন শেরপুরের তরুণ মেহেদী হাসান হিমেল। নিজের বিক্রি করে হলেও মাকে বাঁচাতে চান তিনি। তাই কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে নগরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন এই তরুণ।
ঢাকার মহাখালী, তেজগাঁও আর গাজীপুরের চৌরাস্তার অলিতে-গলিতে দেখা মিলবে তার লাগানো এই পোস্টারের। সেখানে লেখা, মায়ের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে চান মেহেদী।
কিন্তু দিনরাত পোস্টার লাগানোর পর এসে মেহেদী দেখেন, আরেক পোষ্টারে ঢাকা পড়েছে তার কিডনি বেচার আকুতি।
মায়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে চাকরীর খোঁজে ২২ দিন আগে ঢাকায় আসেন মেহেদী। এই শহর তার বড় অচেনা। কাউকে চেনেন না তিনি। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে মহাখালী আর তেজগাঁওর ফ্লাইওভারের নীচে রাত কাটে তার।
মেহেদী জানালেন, একটি চাকরীর জন্যে বহু দারোয়ানের পা পর্যন্ত ধরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কাজ হয়নি।
তবে এছাড়া যে তার আর কোনো উপায়ও নেই। মায়ের চিকিৎসার জন্যে প্রতিদিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে, যা গেলো একমাস ধরে বন্ধ।
শিক্ষার্থী মেহেদী জানান, করোনার শুরুর দিকে হঠাৎই তার মা স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দেখা দেয় হার্টের সমস্যা।
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালে মেহেদীর বাবা তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র সংসার করা শুরু করলে বাড়িছাড়া হন মেহেদী ও তার মা হেনা বেগম।
মা হেনা বেগম জানালেন, তিনি এতদিন গার্মেন্টসে কাজ করে সংসারের হাল ধরলেও, এখন সেই ভার পড়েছে ছেলের উপর।
তাদের গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকার অভাবে তারা বাড়ি ভাড়া দিতে পারছিলেন না। এক বছর আগে মেহেদীর মা এক আত্মীয়ের সাথে মেহেদীকে বিয়ে দিলে সেই সংসারও চলছে চরম অভাবে।
মেহেদীর স্ত্রী মৌসুমি আক্তার বলেন, তাদের নতুন সংসারে অনেক দিন গেছে টানা তিনদিন কিছু না খেয়ে।
মেহেদীর কাছে তার মা-ই তার পৃথিবী। নিজের জীবনের বিনিময়েও তিনি চান মায়ের জীবন বাঁচুক। তাই দিনভর এই শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।
কপিরাইট একাত্তর টিভি