প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২৩ , ৫:১৪:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ
আলমগীর হুসাইন অর্থ:-
সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন( আহাম্মাদপুর, রানীনগর,সাগরকান্দী, দুলাই, তাতীবন্দ, ভায়না, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ও হাটখালী) ও সুজানগর পৌরসভা এবং বেড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ( জাতসাখিনী,পুরান ভারেঙ্গা, রুপপুর, মাসুমদিয়া ও ঢালারচর) ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা – ২ সংসদীয় আসন গঠিত।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হায়দার আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির এম এ মতিন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে হ্যা/না ভোটে বিজয়ী হয়ে জাতীয় পার্টির বীরমুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ক্ষমতায় স্থায়ী হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ওসমান গনি খান (ওজি খান) বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৯,৩৪৫ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামিলীগ প্রার্থী আহমেদ তফিজ উদ্দিন কে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ফ্রেবুয়ারী মাসে বিএনপি তত্তাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচন করলে পরবর্তীতে বাতিল বলে গণ্য হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আহমেদ তফিজ উদ্দিন আওয়ামিলীগের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি প্রার্থী একেএম সেলিম রেজা হাবিব কে ১,৫০৫ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য আহমেদ তফিজ উদ্দিন মৃত্যুবরন করলে উপনির্বাচনে একে খন্দকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।২০০১ সালের নির্বাচনে একেএম সেলিম রেজা হাবিব বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামিলীগ প্রার্থী মির্জা আবদুল জলিল কে ১১,৬৯১ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামিলীগ প্রার্থী এয়ারভাইস মার্শাল একে খন্দকার ২১,৭৩০ ভোটে বিএনপির প্রার্থী একেএম সেলিম রেজা হাবিব কে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর একতরফা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ ২,৩৬,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী একেএম সেলিম রেজা হাবিব কে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গ্রহনযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচনের স্বীকৃতি পাওয়া ১৯৯১,১৯৯৬,২০০১ ও ২০০৮ সালের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাবনা -২ আসনের ফলাফল ও বড় দুইদলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামিলীগের ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নয়। এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলীয় প্রার্থী নির্বাচন, নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ও সাধারণ জনগণের ভোটই এখানে জয়- পরাজয়ের কারণ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে এই আসনে প্রায় ডজনখানেক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী প্রচার – প্রচারণা শুরু করেছেন। এসব প্রার্থীদের ব্যানার, পোষ্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র। যাদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, বর্তমান সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান উজ্জল।
খন্দকার আজিজুল হক আরজু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু।তিনি পাবনা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। এছাড়াও তিনি বেড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। আমিনপুর থানা এলাকার জনগণ ও তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন আমিনপুর থানা কে উপজেলায় রুপান্তরিত করতে হলে খন্দকার আজিজুল হক আরজু সংসদ সদস্য হওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়াও সুজানগর উপজেলায় তার ভালো জনসমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেলে তিনি ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
আহমেদ ফিরোজ কবির: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার- প্রচারণা চালাচ্ছেন আহমেদ ফিরোজ কবির। তিনি পাবনা – আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি।
কামরুজ্জামান উজ্জল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম কামরুজ্জামান উজ্জল। তিনি পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনী এলাকার জনপ্রিয় ও তৃণমুলের ভরসাস্থলখ্যাত দুই রাজনৈতিক নেতা সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহাব ও আমিনপুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বাবু তার সাথে থাকায় তিনিই এখন অত্র আসনের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যারা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে পাবনা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড. একেএম সেলিম রেজা হাবিব, বাংলাদেশ কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সাজ্জাদ।
এ্যাড.সেলিম রেজা হাবিব: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপির) মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অত্র আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. একেএম সেলিম রেজা হাবিব। তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে এই প্রার্থীর।
কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল ( বিএনপি) মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের মূল দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করায় সারাদেশ ব্যাপী তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বিএনপির উচ্চপর্যায়ে রয়েছে তার ভালো অবস্থান। তৃণমূল বিএনপির একটি বড় অংশ তাকে সংসদ সদস্য হিসেবে চায়।
আব্দুল হালিম সাজ্জাদ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা -২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চায় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সাজ্জাদ। তিনি পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ও মাঠ দখল কে কেন্দ্র করে দুইদলের মধ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক কোন্দল দৃশ্যমান। যা আসন্ন নির্বাচনে দুই দলের জন্যই হতে পারে ভোগান্তির কারণ বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।