প্রতিনিধি ২৩ এপ্রিল ২০২৫ , ১:৫৪:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকল্প স্বচ্ছতায় বাস্তবায়নে প্রশংসায় ভাসছেন সাঁথিয়ার এসিল্যান্ড সাদিয়া সুলতানা
বিশেষ প্রতিনিধি:
পাবনার সাঁথিয়ার পৌরসভার অনুন্নত এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ শতভাগ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন সাঁথিয়ার ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড)ও সাঁথিয়া পৌর প্রশাসক সাদিয়া সুলতানা। টেকসই উন্নয়নে নিয়মিত প্রকল্প এলাকায় গিয়ে তদারকি করায় সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
বর্তমান অর্থবছরে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই সরাসরি প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন করা, ইতোপূর্বের মেয়ররা সব প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়ে থাকলেও বর্তমান পৌর এলাকায় টেকসই উন্নয়নের কাজের মানসম্মত ঠিক হওয়ায় সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি।
সাঁথিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার মোট ৩৩ টি রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ৪ টি উন্নতমানের ড্যানেজ ব্যবস্থার কাজ ও একটি ঈদগাহের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এদের মধ্যে সৈয়দপুর সাত্তারের বাড়ি হতে জুলুম হাজির বাড়ি পর্যন্ত ২১৫ মিটারের আরসিসি গোপাট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ছেছানিয়া বেড়া-মাধপুর রোড থেকে সাঁথিয়া ব্রীজ পর্যন্ত ১৪০০ মিটার ডিসি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ।
সৈয়দপুর, দক্ষিণ পারা বাজার হতে ছোটবাবুর বাড়ী অভিমুখে নিয়ে কোভিড’১৯ টি প্রকল্পের আওতাধীন ৪৯০ মিটার রাস্তা নির্মাণ। যেসব প্রকল্প বর্তমানে চালু রয়েছে।
আইইউজিআইপি,আইইউডিআইপি,কোভিড’১৯,, এডিপির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে।
সাঁথিয়া পৌরসভার এসব অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসী সূত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব রাস্তাগুলোতে আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমপরিমাণ কাদায় পরিনত হতো। বৃষ্টি হলে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারত না। কৃষকরা কৃষি পণ্য নিয়ে বাড়িতে আসতে পারত না। যাতায়াতের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতো স্থানীয়রা। আওয়ামী আমলের ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন নেতাদের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুড়েও কোন সহযোগিতা পাননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অনুন্নত এলাকায় উন্নয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার।
সড়েজমিনে এসব প্রকল্প এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে, ওইসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নারী পুরুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তুরের জনগণ উচ্ছ্বসিত অবস্থায় আছেন। বিশেষ করে রিকশাচালক, অটোরিকশাচালক, ভ্যানগাড়ীচালকরা খু্বই খুশি। মানসম্মত ইট,বালি, খোয়া বা অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তার দুপাশ দিয়ে পাইলিং সিস্টেম করা হয়েছে। যাতে করে ঝড় বৃষ্টি বা বৃষ্টি হলে রাস্তা ভেঙে না যায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকার মানুষ বিএনপি ও জামায়াত পন্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের সরকার সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। অনেক সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘুষ দিয়েও কাজ করানো যায়নি।
সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক প্রামানিক বলেন, আগে আমাদের এই রোড দিয়ে চলাচল করাই যেত না। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমপরিমাণ কাদায় পরিনত হতো। এসিল্যান্ড মেডাম আমাদের দু:খ দুর্দশা দেখে রাস্তা করে দেছে। আমাদের এখন আর কষ্ট হবে না। বর্তমান সরকার ও এসিল্যান্ড মেডামকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এসিল্যান্ড মেডাম সরেজমিনে এসে বারবার কাজ তদারকি করে গেছেন। ওনি আমাদের এলাকার লোকজনের দুর্দশা দেখে তিনি কাজ করে দিয়েছেন।
আরেক ভ্যানচালক শাহাদুল ইসলাম বলেন, আগে বৃষ্টি হলেও দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা রাস্তায় চলাচল করতে পারতাম না। খুবই কষ্টে আমরা হাজারো জনগণ ছিলাম। আমাদের ছেলে মেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না। এখন যেহেতু রাস্তা করা হয়েছে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আরেকজন কুবাদ আলী বলেন, এখানে দুটি রাস্তা সাঁথিয়া পৌরসভা থেকে করা হয়েছে। কাজের মান খুবই সুন্দর হয়েছে। ইট বালু খোয়া থেকে শুরু করে সকল সামগ্রী মানসম্মত ব্যবহার করা হয়েছে। কাজের মানে আমরা খুবই খুশি।
ছেছানিয়া গ্রামের স্কুল ছাত্রী আজমিরা খাতুন বলেন, আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিনত হতো। আমরা স্কুলে যেতে পারতাম না। স্যারেরা আমাদের বকা দিতো। এই রাস্তা হওয়ায় আমরা এখন ঝড় বৃষ্টি হলেও অন্তত স্কুলে যেতে পারব। আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে এসিল্যান্ড ও সাঁথিয়া পৌর প্রশাসক মেম সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ। স্বৈরাচার বিদায় হওয়ার পর আমরা উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি।
মকবুল হোসেন বলেন, ৫ আগষ্টের আগে প্রকল্প পাশ করাতো। কিন্তু কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে আওয়ামী লীগের মেয়ররা। তাদের নেশা ছিল অর্থ আত্মসাৎ। এসব অর্থ লোপাট ও প্রকল্প আত্মসাৎকারীদের নেতা ও মেয়রদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সাঁথিয়া পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশল আহসান হাবিব বলেন, জনগণের ভোগান্তি যাতে শেষ করা যায় সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এসিল্যান্ড মেডামের নির্দেশনায় এসব প্রকল্প স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
সাঁথিয়া উপজেলার ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও সাঁথিয়া পৌরসভার প্রশাসক সাদিয়া সুলতানা বলেন “আমরা চেষ্টা করছি পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে নীতিমালা অনুসরণ করে কাজ করতে। একটি প্রকল্পও নীতিমালার বাইরে গ্রহণ করা হয়নি।” পৌরসভাকে আধুনিক ও মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছি। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কাজ করছি। এলাকার মানুষেরও ব্যাপক সহযোগীতা পাচ্ছি। সাধারণ জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, আমি আজ ৮ মাসের মত পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে আসছি। যতটুকু সময় পেয়েছি দারুণভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। এলাকায় যাচ্ছি। সব এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছি। সেখানে অনুন্নত রয়েছে সেখানে প্রকল্প গ্রহণ করতেছি।
তিনি আরও বলেন, “কেউ যেন টাকার অপব্যবহার না করতে পারে, সেজন্য আমরা প্রতিটি প্রকল্পে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রেখেছি। মানুষের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।” কোন কর্মকর্তা যাতে সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পে যাতে কোন অনিয়ম দুর্নীতি না হয় সেদিকে শতভাগ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। সাঁথিয়া পৌরসভাকে আলোকসজ্জা ও একটি ডাম্পিং ব্যবস্থা করতে কাজ করছি।