• সারাদেশ

    রূপগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএসহ মসজিদের সম্পত্তি দখল করে অবৈধ বালুর ব্যবসা: সাবেক জব্বার মেম্বার

      প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:৪৩:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    এনামুল হক :- স্টাফ রিপোর্টার।

     

    নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর তীর বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)সহ মসজিদের ইমাম সম্পত্তি দখল করে অবৈধ বালুর ব্যবসা করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী জব্বার মেম্বার। নদীর তীর ও রূপসী-কাঞ্চন বাইপাস সড়ক ঘেঁষা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় বালুর স্তুপ করে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ওই এলাকাবাসী ও রূপসী-কাঞ্চন বাইপাস সড়কে চলাচলরত যানবাহন পথচারী। বালুর পানি সড়কে এসে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

     

    জানা গেছে, উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ঋষি পাড়া এলাকায় মুড়াপাড়া মৌজার ৪,৫,৬,৭,৮ ও ৯ নং আরএস দাগের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ এবং মসজিদের সম্পত্তিসহ প্রায় ৩ বিঘা জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জব্বার মিয়া। এখান থেকে প্রতিদিব শতশত ট্রাক বালু বিক্রি করছেন এ প্রভাবশালী ব্যক্তি। রূপসী-কাঞ্চন বাইপাস সড়কের পাশে বালু বিক্রি করায় এখানে প্রতিনিয়তই যানজটের সৃষ্টি হয়। বালুর গদির পাশেই ৫ শতাধিক পরিবারে গণবসতি এলাকা। বাতাসের গতি একটু বাড়লেই এখানকার বালু উড়ে এসে ঘরের ভেতর পড়ে। এসকল ধুলা বালির কারনে ছোট বড় সকলেই ভোগছে ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। শুধু তাই নয় বাতাসে এ বালু উড়ে পড়ে সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও পথচারীদের চোখে মুখে। এতেও প্রতিনিয়তই এখানে ঘটছে দূর্ঘটনা। ভুক্তভোগীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলেও এর কোনো সুফল পাননি তারা।

     

    এ সড়কে নিয়মিত চলাচলর কভারভ্যান চালক হান্নান মিয়া বলেন, পূর্বাচল থেকে এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ আসা যাওয়া করি। এরকম একটি ব্যস্ততম সড়কের পাশে বালুর স্তুপ দিয়েছে বাতাস আসলেই বালু চোখে এসে পড়ে। তখন চোখে কিছু দেখতে পাইনা। এ বালুর কারণে চোখের অনেক ক্ষতি হয়।

     

    ইজি বাইক চালক জামান বলেন, আমি হাটাবো থেকে মুড়াপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রতিদিন অটো চালাই। আমরা মুড়াপাড়া বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে হাটাবোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছালেই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জব্বার মেম্বারের বালু ও পাথরের গদি থেকে বাতাসের সাথে বালু উড়ে রাস্তা পুরো ঘুলা হয়ে যায় এবং আমাদের ও যাত্রীদের শরীরসহ পুরো গাড়ির গ্লাস বালু দিয়ে ভরে যায় এমনকি আমাদের চোখেও বালু যায় এতে করে আমাদের অটো ড্রাইভার, যাত্রী ও সাধারণ জনগণের চলাচল করতে অসুবিধা হয়।

     

    ইজিবাইকের যাত্রী সিরাজ মিয়া বলেন, রাস্তার পাশে বালু ও পাথরের গদি থেকে ট্রাক ও পিকআপ দিয়ে বালু ও পাথর আনা নেওয়া করার কারণে ঘুরা পাথর থেকে পাথরের বড় খোয়া সড়কের রাস্তার উপরেই পরতে থাকে। সড়কের উপরে এ পাথর পরে থাকার কারণে আমরা অনেক সময় দেখি গাড়ি চালকরা গাড়ি জায়গামতো ব্রেক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলে থামাতে পারেনা। এ কারণে এই সড়কে প্রায়ই একের পর এক দূর্ঘনা ঘটে।

     

    এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, জব্বার মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে শীতলক্ষ্যা নদী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাসহ, মসজিদের জায়গা দখল করে বালুর ব্যবসা করছে। বাতাস আসলে জব্বার মেম্বারের বালুর গদি থেকে বালু উরে রান্না কররা সময় আমাদের খাবারে এসে পরে।আমরা তার বালুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমরা এলাকাবাসী এ বিষয়ে মেম্বার, চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ অবৈধ বালু ও পাথরের স্তুপ যেন এখান থেকে দ্রুত অপসারণ করা হয়।

     

    এদিকে বানিয়াদী ঋষিপাড়া এলাকার এক গৃহবধূ জানায়, রান্না করার সময় বাতাসের সাথে বালুর গদি থেকে বালু উড়ে এসে আমাদের খাবারের উপর পরে খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমনকি আমরা জামা কাপড় বাইরে রোদের মধ্যে শুকাতে দিলে বাতাস বালুর গদি থেকে বালু এসে সব জামাকাপড়ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ও ঘরের ভিতরেও বালু ঢুকে পরছে। এ বালুর কারণে আমাদের অনেক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা মহিলা ও পুরুষ মিলে

    ১২ জন বালুর গদিতে গিয়েছিলাম। আমরা আমাদের অসুবিধার কথা জানালাম বালু ব্যবসায়ীদের তারা আমাদেরকে বললো বাতাস আসলে বালু উরবেই। তবে আমরা সাধারণ জনগণ এলাকাবাসী খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি আমাদের ভোগান্তি দেখার কেউ নাই।

     

    এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জব্বার মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বল্লে তিনি জমি ক্রয় করেছেন বলে দাব করেন। পরে তার কাছে মসজিদ দখল, বিআইডব্লিউটিএর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ক্রয় করেছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা এড়িয়ে জান। এবং জাব্বার মেম্বার সাংবাদিক কে সরাসরি দেখা করার বলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে ওনাকে আবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না।

     

    এ বিষয়ে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ তোফায়েল আহমেদ আলমাছ বলেন, জব্বার মিয়ার বালুর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ঐ এলাকার অনেকেই আমার কাছে বিচার নিয়ে আসছে। এ বিষয়ে জব্বার মিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য তাদেরকে বারবার আমার ইউনিয়ন পরিষদের ডাকলেও আসে নি তারা। তবে তার বালুর ব্যাপারে আমি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে আামাকে।

     

    এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ মসজিদের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বালুর স্তুপ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ