প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২২ , ৯:০৩:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
শহিদুল ইসলাম নওগাঁ প্রতিনিধি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছে। তাহলে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ কোথায় গেল? বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ কোথায়? জনগণ এটা জানে যে, আপনার উন্নয়নের সামনে রয়েছে পর্দা। যেখানে আছে মানুষের কঙ্কাল। আজকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বলছে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে পারছে না। আজকে উন্নয়ন কোথায়? দুর্ভিক্ষের হাতছানি কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ও দলীয় এবং আত্নীয়-স্বজনের জন্য উন্নয়ন করেছেন।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্টেডিয়ামে উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তার মন্ত্রী এমপিদের পকেট হাতড়ে দেখলে রিজার্ভের টাকা বের হবে। আওয়ামী লীগের যারা কানাডায় বেগম পাড়া বানিয়েছে তাদের পকেটে রিজার্ভের টাকা আছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ভালো মানুষ হতে হলে সত্য কথা বলতে হবে। মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন কিন্তু হতে পারবেন না। আপনি মানুষের কল্যাণ ও শান্তি দিতে জানেন না। আপনি নূরে আলম, আব্দুর রহিম ও শাওনকে গুলি করে হত্যা করতে জানেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে অন্যায়ভাবে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে শতকরা ৫০ শতাংশ। আজকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দিনে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি বা বাতি জ্বালাতে হবে। তাহলে এই কদিনেই বিদ্যুৎ, চাল-ডাল উধাও হয়ে গেছে? কারণ আপনার নিষ্ঠুর ভুল নীতি। কারণ আপনি জোর করে ক্ষমতায় আছেন। তিনি মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানানোর রেসিপি দিয়েছেন। তিনি কি সেটা খান?
রিজভী বলেন, নির্বাচন হয় দিনের আলোতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণের দুর্বার আন্দোলন ও শক্তিকে ভয় পায় বলেই দিনের ভোট রাতে করেছেন।
তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট আড়াল করার জন্য তিনি ইনডেমনিটি আইন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রধান অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। আর যে ঘটনার সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই তাকে সেই মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছেন। আর আপনি ডাকাতের মতো সিংহাসন ধরে রেখেছেন। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলেন। আর শেখ হাসিনা এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনের কথা বলেন। এখানেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার পার্থক্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। কোনো বুলেট ও টিয়ারশেল আমাদের রুখতে পারবে না। আজকে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় নেই। মনে হয় জনগণ ক্ষমতায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির গণসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণিত করে। এটা হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের সম্মান ভালোবাসা। ইনশাআল্লাহ দেশ থেকে তৃণমূল নেতাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার নমরুদীয় শাসনের অবসান হবে। তারা কোনো ধর্মঘট বা অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আমাদেরকে রুখতে পারবে না। আমাদের নেতা চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর গুম খুনের বিচার একদিন দেশের মাটিতে হবে।
এর আগে জাতীয় এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রিজভীসহ দলের নেতারা। সুশৃঙ্খল সম্মেলন আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান রিজভী।
রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে ১১টি দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়। রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে রাজশাহী ও নওগাঁ পৌঁছালে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ৫৪৮ জন কাউন্সিলের ভোটের মাধ্যমে বদলগাছী উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। ফজলে হুদা বাবুল ও আবদুল হাদী চৌধুরী টিপু দ্বিতীয়বারের মতো বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
বদলগাছী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলের পরিচালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকত, নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক সনি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন, জাসাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ইথুন বাবু, জাহিদুল আলম হিটো, নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজীদ হোসেন পলাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম টুকু, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো. রেজাউল ইসলাম রেজু, মো. আমিনুল হক বেলাল, মো. মামুনুর রহমান রিপন, মো. শফিউল আলম রানা সহ বদলগাছী উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের শীর্ষ নেতারা। এসময় নওগাঁ জেলার অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।