• সম্পাদকীয়

    রংপুর সিটি নির্বাচন

      প্রতিনিধি ৭ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:৪৬:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যদিও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।

     

    উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

     

    জানা যায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ২২৯টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। তীব্র শীত উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে আসেন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেলেও বিকালে ছিল উপচেপড়া ভিড়।

     

    ভোটগ্রহণের পরিবেশ নিয়ে ভোটাররা সন্তুষ্ট হলেও ইভিএমে ধীরগতিতে ভোটগ্রহণের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় ভোটারদের। এতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। জানা যায়, সকাল থেকেই ইভিএমে ধীরগতি থাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের নির্ধারিত সময় সাড়ে ৪টার পরও ভোট নেওয়া হয়। এমনকি সন্ধ্যা ৬টার পরও বেশকিছু কেন্দ্রে চলে ভোটগ্রহণ। আঙুলের ছাপ না মেলায় অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন।

     

    জানা যায়, জাপার মেয়রপ্রার্থী নিজের ভোট দিতে গেলে ইভিএম হ্যাং হওয়ায় প্রথমবার তিনি ভোট দিতে পারেননি। এ সময় ভোটকক্ষের বাইরে বেরিয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে ডাকলে পরের দফায় তিনি ভোট প্রদান করতে সক্ষম হন। দেশে নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই এ যন্ত্র নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়, যা চলমান রয়েছে। ইভিএমের নির্ভরতা ও নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ নানা রকম শঙ্কা প্রকাশ করে থাকে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও একমত হতে পারছেন না। বর্তমানে কোনো কোনো দেশে ইভিএমের সঙ্গে ভোটার ভেরিফিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) ব্যবহার হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভোটাররা আশ্বস্ত হতে পারেন যে, তাদের ব্যালট গণনার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যেহেতু ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে, সেহেতু আমাদের দেশেও ভিভিপিএটি পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

     

    ইভিএমের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর প্রতি মানুষের আস্থার সংকটের অন্যতম কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল জালিয়াতি। লক্ষ করা যাচ্ছে, ইভিএম নিয়ে মানুষের সংশয় দূর হচ্ছে না। যেহেতু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেহেতু এ যন্ত্র নিয়ে মানুষের সব ধরনের সংশয় দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ যন্ত্র একবার হ্যাং হলে তা চালু হতে কিছুটা সময় লাগে। বিপুল অঙ্কের অর্থে ক্রয় করা মেশিন বারবার হ্যাং হলে মানুষের মনে হতাশা সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই কোনো নির্বাচনে এ যন্ত্র ব্যবহারের আগে তা ত্রুটিমুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে হবে; পাশাপাশি এ নিয়ে মানুষের সংশয় যাতে দূর হয়, সেজন্যও নিতে হবে উদ্যোগ। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে, মানুষ ইসির কথা ও কাজে অমিল পছন্দ করে না। দেশে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচন উৎসমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।