• আরো

    রূপগঞ্জে বেপরোয়া ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক,প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা

      প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২৩ , ৮:০১:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    এনামুল হক স্টাফ রিপোর্টার:

     

    নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে রেডিমিক্স কনক্রিট, বালু ও পাথরের গদিসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এসকল কারখানার প্রায় অর্ধ সহশ্রাধিক ১০ চাকার ড্রামট্রাক ও মালবাহী ট্রাক আইন অমান্য করে ওভারলোড নিয়ে বেপরোয়া ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । রূপসি-কাঞ্চন বাইপাস এ সড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্য পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা, প্রাণ হারাচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষ।

    গত ১৮ জুন রবিবার ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের চনপাড়া এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়। ১৩ জুন মঙ্গলবার দুপুরে রূপসী-কাঞ্চন সড়কেরর কালাদী এলাকায় ট্রাক চাপায় এক নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

     

    একই দিনে দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্যা যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি ১০ চাকার ড্রামট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুৎয়ের খুটি ও একটি মুদি দোকান ভেঙ্গে রাস্তার পাশে আটকে যায়। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম, সাহিদুল্লাহ ও জোসনা বেগমের বাড়ীর প্রিপেইড মিটারের তার ছিটকে মিটার মাটিতে পড়ে যায়। হাটাবো জেলেপাড়া এলাকায় এনডিই এর রেডিমিক্স গাড়ীর চাপায় ৪ বছর বয়সের একটি শিশু প্রাণ হারায় । হাটাবো আতলাশপুর এলাকায় ড্রামট্রাকের ধাক্কায় আহত হয়ে পঙ্গু অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এক দিনমজুর। উপজেলার মঠের ঘাট এলাকায় বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় ২ মটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলেই মারাযান।

     

    এদিকে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া থেকে কাঞ্চন ব্রীজ এলাকায় এসব ড্রামট্রাকের চাকার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ গাড়ি বালু উপজেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক নামছে নদীর তীরে। প্রতিটি ১০ চাকার ট্রাক বা ডাম্পার বহন করছে অন্তত ৪৫-৫০ মেট্রিক টন বালু। ছয় চাকার ডাম্পার বহন করছে ২৫-৩০ টন। পাঁচ টন বহন ক্ষমতার ট্রাকে বালু যাচ্ছে ১১-১৪ টন। আর অনভিজ্ঞ চালকরা চালাচ্ছে বেপরোয়াভাবে।

     

    বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দুই পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য।

    কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এ রাস্তা দিয়ে এতো বড় বড় ড্রাম ট্রাক চলাচলের কথা না। আমাদের কোনো গাছপালা নাই। ড্রাম ট্রাক যাওয়া আসা করে সমস্ত গাছ ভেঙ্গে ফেলেছে। পাথরের যে ড্রাম ট্রাক গুলো আসে এমন পরিমান ধুলা হয় বাসার মধ্যে কেউ থাকতে পারে না।

     

    ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের রূপগঞ্জ এলাকার ইজিবাইক চালক ইব্রাহীম মিয়া বলেন, এ ড্রাম ট্রাকগুলোর জন্য আমরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। ট্রাকগুলো বেপোরোয়া গতিতে চলে। পাথর বোজাই এ ট্রাক যদি রাতে চলাচল করে তাহলে আমরা নির্ভয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারতাম।।

    মুদি দোকানদার বলেন, আমরা বাসায় থাকতে পারিনা রাস্তাঘাটে থাকতে পারি না । বড় বড় ড্রাম ট্রাক ইচ্ছে মতো যেমন তেমন ভাবে চলাচল করে।

     

    কাঞ্চন এলাকার হিমেল বলেন এনডিই’র গাড়ী এ রাস্তা দিয়ে বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে । এ সড়কে ড্রাম ট্রাকের চাপায় অনেকেরই প্রাণ গেছে। আহত হয়েছে অনেকে। এর কোনো হিসাব নাই। এনডিই ও পুর্বাচলের গাড়ীর বেপোরোয়া চলাচল যদি বন্ধ না হয় দূর্ঘনা একের পর এক ঘটবে।

     

    উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্যাযাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, কাঞ্চন থেকে রূপসী পর্যন্ত এ রোডে এই পাথর বোজাই ড্রামট্রাকগুলো অনেক গতিতে চলাচল করে। এটাতো হাইওয়ে রোড না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি এ রোডে যেন ৩০-৪০ গতির মধ্যে গাড়ী চলাচল করে।

     

    রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ জাহেদ আলী বলেন, আমাদের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া, পূর্বগ্রাম, ইছাখালী ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রূপগঞ্জ, জাঙ্গীর, ও কাঞ্চন ব্রীজ এলাকায় পাথর, বালু, রেডিমিক্সসহ অর্ধ শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।

     

    এসকল প্রতিষ্ঠানের ৭০-৮০ টন ওজনের মালবাহী ড্রাম ট্রাকগুলো চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। জাগায় জাগায় গর্ত হয়ে গেছে। এ ড্রাম ট্রাকগুলো যখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। রাস্তার পাশে থাকা বাড়ী ঘর থরথর করে কাপে। এ ড্রাম ট্রাকের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। অতি শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশ^াস দেন।

    এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, রূপগঞ্জ একটি শিল্পনগরী এলাকা।

     

    রূপসী-কাঞ্চন ও ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালবাহী গাড়ীগুলোর বেপোরোয়া চলাচলের অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিএ বা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ না থাকার কারনে ড্রাইভারের বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে।

     

    তারপরও আমাদের উপজেলা প্রশাসন সকল প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো, যাতে তারা তাদের গাড়ীগুলো নিয়মের মধ্যই চলাচল করে। এদিকে ডেমরা টু কালীগঞ্জ সড়কের রাস্তার কাজ ইতিমধ্যে চলমান। রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে এ দুর্ভোগ আর থাকবেনা।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ