প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৩ , ৯:৩০:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ ইব্রাহিম খন্দকার কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা বিভিন্ন রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র ও ফুচকা হাউজে অবাধে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। নিভৃত পল্লী এলাকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রহীন গড়ে উঠা এসব রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র ও ফুচকা হাউজের ঝুপের ভিতরে খুপড়ি ঘরে অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে দেদারছে চলে মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবন। এসব রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন বয়সী পুরুষ মহিলাদের জাঁক জমক আড্ডা। ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের নিরিবিলি পরিবেশে খাওয়া দাওয়া ও বিনোদনের জন্য গড়ে উঠা এসব রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র এখন এলাকাবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গাজীপুর-আজমতপুর-ইটাখোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশে গড়ে উঠা শীতলক্ষ্যা ফাস্ট ফুড, কুঁড়েঘর রেস্তোরা, নোয়াপাড়া এলাকার ক্যাফে নানা বাড়ী, স্বপ্ন নগর আনন্দ বিলাস, স্বপ্ন ছায়া রিসোর্ট, দুবরিয়া এলাকার স্বপ্ন পুরী ও ইউসুফের রিসোর্ট, রুচিরাজ, আজমতপুর এলাকার রংধনু রিসোর্ট, নিলিবিলি চটপটি হাউজগুলোতে প্রতিদিন জড়ো হয় শত শত যুবক-যুবতী, তরুন-তরুনী ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। কপোত কপোতীরা এসব বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্টে গিয়ে ৫০, ১০০ বা ২০০ টাকার খাবার কিনে ঝুপড়ি ঘরে বসে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য পাচ্ছে অফুরন্ত সময় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিবার, আত্মীয় স্বজনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন নানা বয়সের শত শত কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও তরুন-তরুনী। স্কুল কলেজের পোশাক পড়ে শিক্ষার্থীদের এসব বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্টে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও মালিকরা সামান্য টাকার লোভে পড়ে তাদের প্রবেশে বাধা প্রদান করে না। স্কুল কলেজের পোশাক পড়া শিক্ষার্থী, কিশোর কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ মোটরসাইকেল, সিএনজি, অটোরিক্সা ও প্রাইভেট কারে এসে রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশ করছে। মালিকরা অধিক টাকা পেয়ে নিরিবিলি স্থানে, চারপাশে পর্দা টানানো অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝুপড়ি ঘরে তাদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বা কোচিং এর নাম করে এখানে এসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে।
বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা সাইফুল পালোয়ান জানান, এসব রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে মানুষ পরিবার নিয়ে মন খোলে ঘুরতে ও খাবার খেতে পছন্দ করে। আমিও স্বপরিবারে ঘুরতে আসতাম। কিন্তু বর্তমানে এখানে এলে মনে হয় এগুলো বিনোদন কেন্দ্র নয় যেন রোমাঞ্চ করার স্থান। যুবক-যুবতীদের আপত্তিকর অবস্থান, মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ও মাদকসেবীদের নিরাপদ অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন সাধারণ মানুষ টাকা খরচ করে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসতে ভয় পায়।
স্বপ্ন ছায়া রিসোর্ট এর ম্যানেজার রাবেয়া বেগম বলেন, এই রিসোর্টটি ২০২২সালে চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই পিকনিক ও বিনোদনের জন্য মানুষ আসে। ৫০ টাকায় টিকিট কেটে যে কেউ ভিতরে ডুকে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ড্রেস পরিধান করে ডুকতে মালিক পক্ষের কোন বিধি নিষেধ নেই।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র তানজীম হোসেন জানান, রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র ও ফুচকা হাউজগুলোতে প্রতিদিনই জোড়ায় জোড়ায় যুবক যুবতীরা এসে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। কোন কোন রিসোর্টে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া প্রদান করা হয়। দুবরিয়া এলাকার স্বপ্নপুরী রিসোর্ট ও ইউসুফের নামবিহীন রিসোর্টে মেয়ে ছাড়া ডুকতে দেওয়া হয় না। স্থানীয়রা কেউ এসব অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করলে তাকে হামলার শিকার হতে হয়। সম্প্রতি স্থানীয় মমতাজ শেখের পুত্র হারুন শেখ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে স্বপ্নপুরীর এমরান ও বোরহানগং তাকে মারধর করে।
এ বিষয়ে মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আলমগীর হোসেন বলেন, আমি পরিষদে যাওয়ার পথে প্রায় সময়ই উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের এসব রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখি। আমি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বলে দিয়েছি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিতে এবং এসব অপকর্ম বন্ধ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফায়েজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবসা করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কেউ বিনা অনুমতিতে এবং রিসোর্টের নামে অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ করে দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনা আমার জানা ছিল না। অচিরেই এসব অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।