প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ , ২:০১:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ
আহসান বরিশাল ব্যুরো চিফঃ
ভোলা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম এর দিকনির্দেশনায় চরফ্যাশন সার্কেল এ এসপি ও অফিসার ইনচার্জ, দুলার হাট থানা, ভোলার তত্ত্বাবধানে দুলার হাট থানাধীন মুজিবনগর ইউনিয়নের শিকদার চরের বাসিন্দা বকুল বেগম(৩২)’কে হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারীসহ দুই আসামী, আব্দুল মান্নান(৪৮) ও আব্দুল মালেক (৫২)’কে গ্রেফতার করেছে দুলার হাট থানার একটি চৌকস পুলিশ টিম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, শিকদার চরের জমির মালিকানা নিয়ে দুইটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব আছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মালেক। বকুল বেগম, যাকে হত্যা করা হয় তার স্বামী বাচ্চু এই মালেকের সাথে একই গ্রুপে আছেন। অপর দিকে আছে আসলাম গ্রুপ। ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তারা জনৈক সেলিমের বাসায় বসে পরিকল্পনা করে যে, চরের জমি দখল নেয়ার জন্য একটি হত্যাকান্ড সংগঠিত করতে পারলে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দিয়ে তারা এই জমি ভোগ করতে পারবে। এ পরিকল্পনায় উপস্থিত ছিল মালেক মেম্বার,সেলিম, মান্নান,জসিম ও রফিক। তারা পরিকল্পনামত প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমকে হত্যা করার টার্গেট নেয়। ঘটনার দুই মাস পূর্বে বকুল বেগমের সাথে মালেক গ্রুপের প্রতিপক্ষ আসলাম গ্রুপের সাথে একটি ঝগড়া হয় এবং এই ঝগড়ায় তারা বাচ্চুর স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছিল এবং ঘটনাটি অনেক মানুষের সামনে হয়েছিল সুতরাং তারা যদি বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমকে হত্যা করে তাহলে প্রতিপক্ষ আসলাম গ্রুপের উপর দায় চাপাতে পারবে সহজে।
মালেক মেম্বার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জনৈক ইব্রাহিম নামক এক ট্রাক ড্রাইভারকে ভাড়াটিয়া কিলার হিসাবে ভাড়া করে।এছাড়া মান্নান, সেলিম, জসিম ও রফিক এ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহন করবে বলে ঠিক হয়। গত ২৮ নভেম্বর ইব্রাহীমকে ঢাকা থেকে নিয়ে এসে পরিকল্পনাটি বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং প্রতিশ্শ্রুতি দেয় যে, সে যদি পরিকল্পনা মত কাজ করতে পারে তাহলে চরের ভিতর থেকে তাকে ১০ একর এবং মান্নানকে ৫ একর জমি প্রদান করা হবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে সেলিম, আব্দুল মান্নানকে বিকাশের মাধ্যমে ১৫,০০০ টাকা দেয়। তারা সেই টাকা উঠিয়ে দুইটি চাকু কিনে। ঘটনার আগের দিন ইব্রাহিম, বাচ্চুর বাড়ি এবং ঘরে কয়জন থাকে তা রেকি করে। মালেক মেম্বার মামলার হাজিরা দেওয়ার কথা বলে বাচ্চুকে তার কাছে নিয়ে আসে এবং সেই সুযোগে বকুল বেগমকে হত্যার জন্য অন্যান্য সদস্যদের পাঠায়। ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে সেলিমের ভাইয়ের ছেলের ট্রলারে করে রাতে ইব্রাহীম, মান্নান, জসিম ও রফিক নদী পার হয়ে শিকদার চরে যায়। রফিক বাইরে পাহাড়া দেয়, জসিম নৌকায় অবস্থান করে, ইব্রাহিম এবং মান্নান সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদের জানায়।
উল্লেখ্য যে, গত ইং ২৯/১১/২০২২ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার সময় মোঃ আলম বাচ্চু মেলকার মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। তখন মোঃ আলম বাচ্চু মেলকার এর স্ত্রী বকুল বেগম ও সাক্ষী মুকুল বেগম বসত ঘরে ছিলো। তারা প্রতিদিনের ন্যায় ইং ২৯/১১/২০২২ তারিখ রাতের খাওয়া শেষে বসত ঘরের সামনের বারান্দায় খাটের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। ঐদিন দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ ঘটিকা হতে ০১.৩০ ঘটিকার মধ্যে আসামীরা (মুখ বেঁধে) ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুলারহাট থানাধীন মুজিবনগর ইউনিয়নের শিকদার চরের ৯নং ওয়ার্ডস্থ মোঃ আলম বাচ্চু মেলকার এর পশ্চিম ভিটির দোচালা টিনের বসত ঘরের সামনে বারান্দার হোগল পাতার দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে বকুল বেগমকে এলোপাথারীভাবে কুপিয়ে বুকে, পেটে, ডান ও বাম হাতে এবং বাম পায়ের হাটুর নিচে গুরুতর জখম করে। আসামীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বকুল বেগম এর পেট কেটে নাড়ী-ভুড়ি বেড় হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সাক্ষী মুকুল বেগম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের হাত হতে তার বোন বকুল বেগমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে আসামীরা তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়া তার গলায় পোচ দিয়া এবং হাতে কোপ দিয়া গুরুতর জখম করে ঘটনাস্থল হতে দ্রুত পালাইয়া যায়। তারপর সাক্ষী মুকুল বেগম তার ভগ্নীপতি মোঃ আলম বাচ্চু মেলকার এর বসত ঘরের বেড়ার উপর আঘাত সহ ডাকচিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বকুল বেগমকে বসত ঘরের সামনের বারান্দার মেঝেতে মাটির উপরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এবং সাক্ষী মুকুল বেগমকে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্ণিত ঘটনায় স্থানীয় অলিল চৌকিদার (৪২), পিতা-মৃত ইউনুছ আলী চৌকিদার, মাতা-রিজিয়া বেগম, সাং-শিকদারের চর ৯নং ওয়ার্ড, থানা-দুলারহাট, জেলা-ভোলা থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করলে দুলারহাট থানার মামলা নং-০১, তারিখ ০২/১২/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৪৪৮/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলাটি এসআই/আমিনুল ইসলাম, দুলারহাট থানা, ভোলা তদন্ত করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য যাচাইপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।