• সারাদেশ

    আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে বিজ্ঞান ভিত্তিক নেতৃত্বের সমন্বয় সময়ের দাবী 

      প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২২ , ৪:৫৮:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    ইব্রাহিম হোসেন মুন:

     

     

    অন্যান্য বিজ্ঞানের মত রাজনৈতিক বিজ্ঞান একটি গুরু্ত্বপুর্ন অধ্যায়।আমরা জানি বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে প্রচলিত থাকলেও রাজনীতিতে বিজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ ও তার যথাযথ ব্যবহার বারবার বাধাগ্রস্থ হয়েছে।যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন শুরু করেছিলেন তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে।দীর্ঘ ২১টি বছর রাজনৈতিক বিজ্ঞান চর্চা করা তো দুরের কথা স্বাভাবিক রাজনীতির ধারা উপ ধারার সকল পথ রুদ্ধ আর গনতন্ত্র সে তো অন্ধকারে নিমজ্জিত।গনতন্ত্রবিহিন অন্ধকার রাজনৈতিক জগতে শিক্ষার পরিবর্তে দূর্বৃত্তায়ন, সৈরাতন্ত ও ইতিহাস বিকৃ্তির অপ সংস্কৃতি চালু হয়।

     

    রাজনীতিতে বিজ্ঞান যে কতটা ভুমিকা রাখতে পারে তার জলন্ত উদাহরণ বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোক রশ্মি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও পযুক্তি বিষায়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।তার উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।তথ্য ও পযুক্তির কল্যানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহর বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৌড় গোড়ায়।মুলত শেখ হাসিনা সরকারের যে কয়টি মন্ত্রণালয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তার অন্যতম বিজ্ঞান ভিত্তিক মন্ত্রণালয় “আই সি টি”।মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তথ্য ও পযুক্তির ব্যবহার শহর থেকে গ্রামে সমতালে বিরাজমান।একজন উদ্যাক্তা ও তার বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তাশক্তি দেশ ও জাতিকে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করিয়েছেন।ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মানুষ যাকে ডিজিটাল বাংলার প্রবর্তক হিসাবে জানে।দুঃখ জনক হলেও এটাই সত্য বাংলাদেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল পরিচিতি লাভ করেছে তাদের মধ্যে বিজ্ঞান ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চার অভাব লক্ষ্যনিয়।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা শুরু করলেও সাংগঠনিক পর্যায়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক নেতার সংখ্যা একেবারেই কম।

     

    আমরা জানি বাংলাদেশের পেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সব চাইতে প্রবীন,ঐতিহাসিক এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।যে দল নেতৃত্ব দিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে যার বদৌলতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ভুখন্ড,লাল-সবুজ পতাকা।পরাধীনতার শৃংখল থেকে জাতিকে দিয়েছে মুক্তি,পেয়েছি আমরা জাতির পিতা।এই দীর্ঘ পথযাত্রায় ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,প্রতিটি সম্মেলনে জাতির সামনে বাস্তব সম্মত ও গ্রহনযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার অবিরত চেষ্ট্রা থাকে।সময়ের প্রয়োজনে বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৬ সালে এক ঐতিহাসিক কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই অই বছরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ছয় দফা কর্মসুচি ঘোষনা করেন।বলা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন এবং ছয় দফা কর্মসুচি ঘোষনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক এক বড়সড় পরিবর্তন ঘটে। ৬৬অই সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রজ্ঞা রাজনীতিবিদ তাজউদ্দীন আহমেদ।তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহযোগী।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-তাজউদ্দিনের সমন্বিত রাজনীতিতে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গনবিচ্ছিন্ন নয় জনবান্ধব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ইতিহাসে স্বর্ন অক্ষরে লেখা থাকবে।কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে ইউনিট নেতৃত্বে পূর্নাঙ্গ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হত।সেসময়ের পরিসংখানে দেখা যায় যে মুল নেতৃত্বের প্রায় শতভাগ নেতা ছিল জনবান্ধব। দেশ ও দলের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু সারা বাংলা চষে বেড়িয়েছেন।কত মানুষের কাছে গেছেন,কত জনের সহিত পরিচিত হয়েছেন তা গবেষনার বিষয়।সারা বাংলা অবিরাম বিচরনে বঙ্গবন্ধু এমন কিছু নেতার সন্ধান পেয়েছিলেন তারাও আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ন অক্ষরে লেখা থাকবে।নতুন প্রজম্মের সুবিধার্থে সংক্ষিপ্ত আকারে “ময়মনসিংহে সৈ্যদ নজরুল ইসলাম,রাজশাহীতে কামরুজ্জামান হেনা,অবিভাক্ত পাবনার এম ক্যাপ্টেন মনসুর আলী,চট্রগ্রামে জহুর উদ্দিন আহমেদ,যশোরে শেখ আব্দুল আজিজ,খুলনার এম এ আজিজ, টাঙ্গাইলের আব্দুল মান্নান,চাদপুরের মশিউর মিজানুর রহমান চৌধুরী,দিনাজপুরের অধ্যাপক ইউসুফ আলী” প্রমুখ-এরকম আরো অনেকেই ছিলেন যারা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও সততার কারনে আওয়ামী লীগের জন্য সম্পদে পরিনত হয়েছিলেন।শেখ মুজিবুর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন আওয়ামী লীগ যে একটি জনপ্রিয় দল হয়ে উঠলো তার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান নিজে প্রধান চরিত্র হলেও নেপথ্যে এক ঝাক নেতার নিরলস চেষ্টার কথাও মনে রাখতে হবে।

     

    দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়,স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্টার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পেলেন না।৭৫ এর ১৫ আগস্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বিপদগামী সেনাবাহিনীর একাংশ কাকডাকা ভোরে বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারকে হত্যা করে।মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র এবং ভারত বিরোধী জোটের বিপক্ষে সম্মিলিত আঘাত মোকাবেলা করা সম্ভাব হয়নি।বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য এক নতুন বাস্তবতার জম্মনেয়।বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু আওয়ামীলীগ আছে যেন পরাধীন কোনো এক দেশে।এমন পেক্ষাপটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মাথা তুলতে না দেওয়ার জন্য অনেক অপচেষ্টাই হয়েছে।খুনিদের পৃষ্টপোষকতায় ক্ষমতার চুড়ায় উঠে সামরিক ডিকটেটর জিয়াউর রহমান।তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন তা মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগকে চলার পথ তৈ্রী করতে হয়েছে।বিরুপ পরিবেশ,বৈ্রী সময় অই কঠিন পরিক্রমায় আওয়ামী লীগের জন্য ছিল বিরাট এক চ্যালেন্স।এহেন বাস্তবতায় ১৯৮১ সালে ১৪,১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সীল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে দল নেয় এক যুগন্তকারী সিদ্ধান্ত।সেসময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা,শেখ রেহেনা,শিশুপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় শিশুকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সকলেই দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন।সম্মেলনের এক সাপ্তাহ পর ২৪শে ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের বর্যীয়ান নেতা আব্দুল মালেক উকিল,ড.কামাল হোসেন,জিল্লুর রহমান,আইভি রহমান,আব্দুস সামাদ,আব্দুল মান্নান,এম কোরবান আলী,বেগম জুহুরা তাজউদ্দিন,গোলাম আকবর চৌধুরী,সাজেদাচৌধুরী,আমির হোসেন আমু,আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ ঢাকা থেকে দিল্লি পৌছান এবং শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত একাধিক মিটিং করে দেশ ও দলের চিত্র তুলে ধরেন।সব জেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে আসার প্রবল আগ্রহের কথা জানান।শুরু হয় দেশে নেত্রীকে দেশে আনার প্রস্তুতি।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পক্ষে দেশ ও জাতিকে জানানো হয় আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসি্না ১৭মে স্বদেশে আসবেন।এখনকর মত মিডিয়া এতটা স্টং ছিলনা তবুও ঝড়ের গতিতে নেত্রী আসবেন এসংবাদ বাংলার আকাশে বাতাসে।এর মধ্যে শুরু হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের যড়যন্ত্র।সরকারের মুখোমুখী অবস্তানে দাঁড়িয়ে যায় আওয়ামীলীগের প্রতিটি নেতা/কর্মী।১৭ মে ১৯৮১ সাল দিনটিও ছিল সেসময়ের রাজনীতির মতই।ঝঞ্জা-বিক্ষুদ্ধ।কাল বৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া ঘন্টায় গতিবেগ ৬৫ মাইল।প্রচান্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগ সেদিন গতি রোধ করতে পারেনি গনতন্ত্রকামী লাখো লাখো মানুষের মিছিলকে।যার যার মত প্রিয়নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য কুর্মীটোলা বিমান বন্দর জনসুমুদ্রে পরিনিত হয়।অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষন নেত্রী আসলেন বিকাল ৪ ঘটিকায়।অশ্রু আর বেদনার মহাকাব্যের জম্মনেয় কুর্মীটোলার বিমান বন্দর। সেসময়ে স্বাধীনতার অমর স্লোগান “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রধ্বনিতে ঘোষিত হয়েছিল ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে আমরা লক্ষ ভাই বেঁচে আছি, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’

     

    নিজ দেশের মাটি ও জনতার প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান রেখে লক্ষ লক্ষ জনতার সংবর্ধনায় আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।“আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।” তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।আমার অবুঝ দুই সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয় আর সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহেনার কাছে সদুর দিল্লিতে রেখে এসেছি। তিনি আরো বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।”

    দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় তার নেতা হত্যার বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।এর পর থেকে আওয়ামী লীগকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।তিনি হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগের ঐক্য আর সংহতির প্রতিক।২২তম সম্মেলনে তিনিই হবেন টানা দশম বারের মত আওয়ামী লীগের সভাপতি।নিজ প্রজ্ঞা আর মেধায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্ব দরবারে।তবে আমরা হতাশার সহিত লক্ষ্য করছি সাম্প্রতিক সময়ের আওয়ামী রাজনীতিতে জনবিচ্ছিন্ন ও বিশ্বাস ঘাতক রাজনীতিবিদ সুকৌশলে ঢুকে পরে আওয়ামী লীগের অতীত সুনাম বিনষ্ঠ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।এছাড়া কিছু নেতার অগ্রহনযোগ্য কথাবর্তা দলের ভাবমুর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।এখনি সময় তাদের দল থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করার সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ভিত্তিক ও জনবান্ধব নেতাদের অন্তভুক্তি সময়ের দাবী।

     

    ইব্রাহিম হোসেন মুন।সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

     

     

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ