• সারাদেশ

    রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা পেঁয়াজ চুরি

      প্রতিনিধি ২২ মার্চ ২০২৪ , ৩:৫৫:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    বেড়া,সাঁথিয়া(পাবনা)প্রতিনিধি: পেঁয়াজের ভান্ডার পাবনার বেড়া সাঁথিয়ায় গত বছর পেঁয়াজ চাষে লোকসান হওয়ায় চলতি বছর মুড়িকাটা(মুলকাটা) পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছে। বর্তমানে হালি পেঁয়াজেও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। তবে শঙ্কার কথা হলো,রাত হলেই ক্ষেত থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকেরা।

     

    বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে প্রতি রাতেই ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে কাঁচা পেঁয়াজ । কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন অনেক চাষি। কিন্তু পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা পেঁয়াজ চুরি।

     

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল আগাম বা মুড়িকাটা(মূলকাটা) জাতের পেঁয়াজ যা অনেকদিন আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে।আর এখন মাঠে রয়েছে দানার দেশি হালি পেঁয়াজ এসব জমির পেঁয়াজই চুরি হয়ে যাচ্ছে। তবে নাম না প্রকাশের সর্তে অনেকেই বলছেন পাটগাড়ি গ্রামে অনলাইন জুয়া যেভাবে ছরিয়ে পড়ছে খেলার টাকা জোগার করতে তারাও এ কাজ করতে পারে।জুয়া খেলোয়ারদের মাঝে মাঝে মারামারি ও ভাংচুর করতে দেখা যায়। জুয়ার টাকা জোগার করতে তারা সব কিছু করতে পারে,চুরিতো স্বাভাবিক ব্যাপার।

     

    পাটগাড়ি এলাকার পেঁয়াজ চাষি মন্টু খান জানান, এ বছর ধার দেনা করে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। রাতে পাহাড়ায় থাকেন তার পরেও গত রবিবার(১৭মার্চ) রাতের কোনো এক সময় পেঁয়াজের ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে।

     

    সরেজমিনে সোমবার(১৮ মার্চ) পাটগাড়ি এলাকায় গিয়ে জানা যায়,গত এক সাপ্তাহে তায়জাল খান,মুন খান,মজিদ প্রাঃ,হামিদ প্রাঃ ও ভীটাপাড়া গ্রামের শাহ-আলম প্রামাণিকসহ অন্তত ১০ জন কৃষকের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে।রাত জেগে পাহারায় থাকার পরেও তায়জাল খানের প্রয় ৮ মণ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার রাতে।তাই তিনি পেঁয়াজ তুলে ফেলার কথা ভাবছেন,অথচ তাঁর পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে এখনো অন্তত ২০ দিন সময় লাগবে।

     

    সাঁথিয়া উপজেলার পাটগাড়ি এলাকার নূর-নবী প্রাঃ জানান,এ বছর ধার দেনা করে দেড় বিঘা জমিতে এবার পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। বাড়ি থেকে পেঁয়াজের ক্ষেত দূরে হওয়ায় সব সময় পাহাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না, তবে প্রতি রাতেই অনান্য কৃষকদের সাথে ক্ষেতে বসানো ছাউনিতেই থাকছেন তিনি।

     

    দেখা যায় জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন আলহাজ্ব সরদার। তিনি বলেন, এবছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের খেতে চোরের উৎপাত খুব বেড়ে গিয়েছে।কয়েক দিন রাতে পাহারা দেওয়ার পরেও পুরো পুষ্ট হওয়ার আগেই জমির সব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

     

    কৃষকেরা জানান, বর্তমানে ক্ষেতের সব পেঁয়াজই বেশ বড় হয়েছে। দুই হাতে একসঙ্গে হালকা করে গাছ ধরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১০ থেকে ১২টা পেঁয়াজ উঠে আসে। তাই সুযোগমতো দুই-তিনজন চোর এসে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছে।

     

    সরেজমিনে উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতের বেলা কৃষকেরা কয়েকজন মিলে সেখানে বসে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেন। এ ছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিচ্ছেন।

     

    সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকেরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। আর ভালো দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। এ বিষয়ে আসলে তাঁদের তেমন কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানানো হবে। থানা-পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রচেষ্টায় এ ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যেতে পারে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ