প্রতিনিধি ৩০ অক্টোবর ২০২২ , ১০:৩২:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশ, না বিএনপির সমাবেশে বেশি লোকের সমাগম হলো, এই নিয়ে দল দুটির মধ্যে জমে উঠেছে কথার লড়াই। এবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ঢাক-ঢোল পিটিয়েও আওয়ামী লীগ ঢাকা জেলার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের চেয়ার ভরানো যায়নি। লোক ভাড়া করেও কর্মীর দেখা পায়নি ক্ষমতাসীনরা।
রংপুরে সমাবেশ করে রাজধানী ফিরে রোববার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের কটাক্ষের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ব্যক্তি আক্রমণ না করতে ওবায়দুল কাদেরের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি কার্যালয়ে সাত নভেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন ফখরুল। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সরকারি গাড়ি–ঘোড়ার সঙ্গে টাকা ব্যবহার করে যে লোকজন নিয়ে এলেন বিশাল নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে, সরকারি জায়গার মধ্যে, সেখানে চেয়ার পর্যন্ত পূরণ করতে পারেননি। ২২ হাজার চেয়ার ছিল পত্রিকায় এসেছে। তো সেই ২২ হাজার চেয়ার যদি পূর্ণ না হয়, তাহলে কত লোক হয়েছে, আপনারাই বলুন।
বিএনপি নেতাদের টাকার উৎস নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি, আমরা কারও পয়সায় রাজনীতি করি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের মানুষেরা প্রত্যেকটি সদস্য তারা নিজেরা চাঁদা দিয়ে এই যে দেখছেন প্রতিটি অনুষ্ঠান, প্রত্যেকে নিজেরা নিজেদের পয়সা দিয়ে তারা এই সমস্ত সমাবেশ করছে, জনগণের কাছে দাঁড়াচ্ছেন- এটাই হচ্ছে আমাদের বৈশিষ্ট্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, আমি নাকি দুবাই থেকে টাকা পাই, টাকার ওপর ঘুমাই। বেশি ঘাটবেন না, বেশি ঘাটলে কেঁচো খুরতে সাপ বেরিয়ে আসবে। দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট.. ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না। সামাল দিতে পারবেন না। কার কয়টা বাড়ি, কার কত টাকা আছে, সবাই জানে। এত টাকা কোথা থেকে আসে? আমি ব্যক্তিগত আক্রমণে যেতে চাই না। এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে শুধু এইটুকু বলতে চাই, অযথা বেশি ঘাঁটাবেন না। কাদা থেকে কিন্তু কেঁচো বেরিয়ে আসে কাদা ঘাঁটতে গেলে। আপনারা কী করেন না করেন, গোটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কীভাবে অর্থ উপার্জন করেন সবাই জানে।
ফখরুল বলেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না। কার কোথায় কত বাড়ি ঘর আছে, কত টাকা সরিয়েছেন, কীভাবে সরিয়েছেন, কীভাবে নিয়ে গেছেন, সব এদেশের মানুষ জানে এবং তা প্রকাশিত হবে। কে কোথায় হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি করছেন, কে কোথায় ব্যাংকের লোন নিয়ে পাচার করে দিচ্ছেন, আপনার সেই কানাডাতে বেগম পাড়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম করছেন, এগুলো বাংলাদেশের মানুষ সব খবর রাখে।
বিএনপি মহাসচিব এ সময় প্রশ্ন রাখেন, ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে আপনারা সচিবদের বাড়ি তৈরি করতে চান। কার টাকা? এই দেশের মানুষের টাকা, এদেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সা। অযথা বেশি ঘাঁটাবেন না, কাদা থেকে কেঁচো বেরিয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, এতই যদি শক্তিশালী হোন, জনগণের প্রতি এতই যদি আস্থা থাকে। এই যে উন্নয়ন, মেগা উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছেন, আর কিছুদিন হলে উন্নত দেশ হয়ে যাবেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তো হয়েই গেছে। তাহলে এত ভয় পান কেন? বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেন না কেন? কেন পরিবহণ বন্ধ করে দেন? গুণ্ডাদেরকে লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষরা সভায় আসতে চায় তাদেরকে আঘাত করেন কী কারণে? একটাই মাত্র কারণ জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি কাজ করতে পারে তাহলে কোনো দিনই ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না।
১৫ বছরের শাসনামলে দেশে অর্থনীতিকে আওয়ামী লীগ সরকার ভাগাড়ে নিয়ে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। এটা আমার কথা নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কথা।
ফখরুল আরও বলেন, রাজনীতির অধিকারের কোনো স্পেস নেই। সব নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। এটাকে বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। এখন তারা বলে বেড়ান, এটা তারা বাতিল করেননি, আদালত করেছেন।
তিনি বলেন, টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ জনগণকে বোকা বানাতে চায়। উন্নয়নের গল্প শোনায়। এত উন্নয়ন করেছেন, তাহলে ভয় পান কেন? কারণ আপনারা ভালো করেই জানেন যে দুর্নীতি করেছেন, তাতে ভোটের মাধ্যমে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যৌথ সভায় বসে বিএনপি। ওই সভার সিদ্ধান্তও জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব বলেন, মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বেলা ২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সকাল ছয়টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
ওই দিন বেলা ১১টায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠ করবেন। এ ছাড়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ইতিমধ্যে সারা দেশে জেলা ও মহানগরের পোস্টার পাঠানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, দলের যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন