প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৩ , ১০:২৬:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
এনামুল হক স্টাফ রিপোর্টার:
সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা চলমান রয়েছে। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। সিন্ডিকেট করে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের নকল সরবরাহে পারস্পরিক নকলে সহযোগিতায় করতে কিছু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজনকে দেখা গেছে সক্রিয় ভাবে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ে এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা থেকে ৫৮৩৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এদের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ৬টি মূল কেন্দ্র ও ১০ টি ভ্যানু কেন্দ্র করে স্ব-স্ব কেন্দ্রে ট্যাগ অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নকলমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সকল কেন্দ্রে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মাঝে নকল সরবরাহ করছে খোঁদ শিক্ষকরা। পরীক্ষা হলে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের তল্লাশি করা হয় না বলেও রয়েছে অভিযোগ। তাছাড়া পরীক্ষা শুরুর প্রথমে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর সংকেত দিতে নির্ধারিত ঘন্টার আগেই বিশেষ কায়দায় তথ্য চলে যায় বাইরে থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা ও ম্যানেজিং কমিটি কিংবা নিয়োজিত কর্মচারীদের হাতে। তারা পাশ্ববর্তী ফটোকপিয়ার দোকান থেকে দ্রুত কপি করে প্রধান ফটক দিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষক দিয়ে পৌঁছে দেয় নকল। আর এমসিকিউর উত্তর সঠিক করতে টার্গেট করা হয় কেন্দ্রে। এ সময় দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসারদের ব্যস্ত রাখা হয় দাপ্তরিক কাজে। মুল কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বিপরিত ভ্যানু কেন্দ্রে থাকায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত শিক্ষকদের সঙ্গে গড়ে তোলা হয় অঘোষিত সিন্ডিকেট। এতে পারস্পরিক সহযোগিতার নামে সরবরাহ করা হয় নকল। এক কেন্দ্রে কঠোর হলে এ খবর কেন্দ্র থেকে মোবাইল ফোনে পৌঁছে দেয়া হয় অপর কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকদের মাঝে। পরে তাদের অবস্থান বুঝে মনগড়া দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকরা৷ এমন চিত্র ১০ টি কেন্দ্রের প্রায় সব ক’টিতে।
কিন্তু গতকাল সকালে ১০:৪০ মিনিটে কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পৌঁছায়নি দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার। তবে যথা সময়ে প্রশ্ন পেয়ে যান কেন্দ্র সচীব মজিবুর রহমান। প্রশ্ন পেয়েই তাদের মাঝে প্রশ্নপত্র দেখার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কিন্তু সাংবাদিকের অবস্থান টের পেয়ে নড়ে বসেন তারা।
তবে এই সূত্র জানায়, এ কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম কেন্দ্রেই আসেননি এদিন। তবে বিগত পরীক্ষা চলাকালীন দু একবার হলে গিয়ে ফিরে আসেন প্রধান শিক্ষকের কক্ষে।
অভিযোগ রয়েছে, গোলাকান্দাইলের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়ের আগেই প্রশ্নপত্র দেখে মোবাইলে ছবি তুলে তা বাইরে নকল সরবরাহের কাজে নিয়োজিতদের হাতে দেয়ার। পরে ফটোকপিয়ারের দোকান থেকে ফের কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়। যদিও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন তা অস্বীকার করেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচীব মজিবুর রহমান বলেন, কোন অনিয়মে জড়িত হওয়ার সুযোগ নাই। তবে ওইদিন ট্যাগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সাহেবের নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ায় তিনি আসেননি। এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন এটিও আশরাফ স্যার।
একই চিত্র ভোলাবো গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, এইচ আর মডেল স্কুল, গোলাকান্দাইল মজিবুর রহমান ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মাঝিনা ফাজিল মাদরাসা, মত্তুর্জাবাদ কামিল মাদরাসা ও কালাদী আলিয়া মাদরাসা সেন্টারের।
অপর একটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ কর্মকর্তা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূরে আলামিন বলেন, সেন্টারে পরীক্ষা শুরুর আগেই আমরা অবস্থান করি। এখানে এমসিকিউ বা কোন প্রশ্নপত্র বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। কারন এসব প্রশ্ন কেবল কেন্দ্র সচীবের হেফাজতে থাকে। পরীক্ষা রুটিন সময়ের ৫ মিনিট আগেও খোলার নিয়ম নাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচীব মোক্তার হোসেন বলেন, স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে দিন রাত পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে সবার আগ্রহ থাকে। তবে কেন্দ্রে এসে নকল সরবরাহের কাজে শিক্ষকরা সিন্ডিকেট করে থাকে বা জড়িত এমন ঘটনা সত্য নয়।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার্থীরা যথা নিয়মে সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া ছাড়াও ম্যাজিস্টেটগণ হল পরিদর্শন করছেন। কোথাও কোন অনিয়মের খবর পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, এ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশ সকল অনিয়ম ছাড়া পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে অসদোপায় অবলম্বনের দায়ে সহিতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও কোথাও কোন শিক্ষকদের নকল সরবরাহের কাজে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।