• সারাদেশ

    নওগাঁর বদলগাছীতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় সঙ্গীত বিচারকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ 

      প্রতিনিধি ১ মে ২০২৪ , ৫:৫৮:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ

     

    নওগাঁর বদলগাছীতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় দুইজন সঙ্গীত বিচারকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দুইজন বিচারক হলেন, বদলগাছী সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. ফাল্গুনী চক্রবর্ত্তী ও গোবরচাঁপাহাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক অসিম কুমার নন্দী। অভিযোগকারী করেছেন বদলগাছী মডেল সরকারি পাইলট হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মোঃ সিজান সি‌দ্দিকীর বাবা সাংবাদিক আবু সাঈদ।

     

    উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অ‌ফিস সু‌ত্রে জানা যায়, ২৯ এপ্রিল (সোমবার) বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজে সঙ্গীত বিষ‌য়ে ৭ টি ক‌্যাটাগ‌রিতে‌ দেশাত্ববোধক, নজরুল সঙ্গীত, র‌বিন্দ্র স‌ঙ্গীত, লোক সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও জারি গান ছিল। এর ম‌ধ্যে জারিগা‌নে কোনও শিক্ষা‌র্থী অংশ গ্রহণ ক‌রে‌নি। অন‌্য সব ক‌্যাটাগ‌রি‌তে ক, খ, গ ও ঘ শাখায় প্রতিযোগি অংশ গ্রহণ ক‌রে। সেখা‌নে ‘খ’ শাখায় লোক সঙ্গীত বিভা‌গে অংশ গ্রহণ ক‌রেন ৪ জন প্রতি‌যো‌গি শিক্ষার্থী। তার ম‌ধ্যে বদলগাছী সরকারি ম‌ডেল উচ্চ বিদ‌্যালয় থে‌কে ৩ টি ক‌্যাটাগ‌রি‌তে অংশ গ্রহণ ক‌রেন সিজান সি‌দ্দিকী। সিজান সি‌দ্দিকী ’খ’ শাখা হ‌তে দেশাত্ব‌বোধক ও র‌বিন্দ্র সঙ্গী‌তে প্রথম স্থান অর্জন ক‌রে।

     

    আবু সাঈদ অভিযোগে বলেন, লোকসঙ্গী‌তে অপর ৩ জন প্রতি‌যো‌গি‌র চেয়ে  সিজান সিদ্দিকী নিজ হাতে হার‌মো‌নিয়াম বা‌জি‌য়ে অত‌্যন্ত সুন্দর গান প‌রি‌বেশন কর‌লেও আ‌গে দুই ক‌্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করায় লোকসঙ্গী‌তে তা‌র কোনও স্থান নির্বাচন ক‌রেন‌নি দুই বিচারক। তার কারণ হি‌সে‌বে জানা যায়, সিজান সি‌দ্দিকী ২ ক‌্যাটাগ‌রি‌তে প্রথম স্থান অর্জন করায়, তাকে লোকসঙ্গী‌তে প্রথম স্থান দেওয়া হয়নি। দুই বিচারক ই‌চ্ছে ক‌রেই এই পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। সঙ্গীত নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি‌যো‌গি নিজে হার‌মো‌নিয়াম না বাজিয়ে গান কর‌লে তার প্রাপ্ত নম্বর থে‌কে ৫ নম্বর বিয়োগ হবে। এমন নিয়ম না মে‌নে বিচারক মন্ডলী সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার করেন নি। লোকসঙ্গীত বিভা‌গে সিজান সি‌দ্দিকী অসাধারণ পারফর্ম কর‌লেও উক্ত বিচারক মন্ডলীর পক্ষপাতমূলক আচর‌ণের কার‌ণে সিজানকে লোকসঙ্গীত বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

     

    তিনি আরও বলেন, কাগজ-কলমে দেখা যায়, তিনজন বিচারক কিন্তু বাস্তবে ছিলেন দু’জন। কাগজ-কলমে তিনজন বিচারক হলেন, বদলগাছী সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. ফাল্গুনী চক্রবর্ত্তী, গোবরচাঁপাহাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক অসিম কুমার নন্দী এবং বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা অ‌ফি‌সের একাডেমিক কর্মকর্তা অ‌নিল কুন্ডু। তারমধ্যে ড. ফাল্গুনী চক্রবর্ত্তীর সঙ্গীতে কোনও অভিজ্ঞতা বা দখল নেই।

     

    তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠান চলাকা‌লীন সময় উপ‌জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে একা‌ডে‌মিক কর্মকর্তা অ‌নিল কুন্ডু‌কে অনুষ্ঠান প‌রিচালনার দা‌য়িত্বে দেখা গেছে, এ জন্যই দুজন বিচারক মন্ডলী পক্ষপাতমূলক আচরণ করার সু‌যোগ পেয়েছে।

     

    আবু সাঈদ আরও বলেন, পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে প্রকৃতরা সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হবে এবং সঙ্গী‌তের উপর থে‌কে দে‌শের বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম মুখ ফি‌রি‌য়ে নিবে। তাই আমি এ বিষ‌য়ে বদলগাছী উপ‌জেলা শিক্ষা ক‌মি‌টির সভাপ‌তি উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। এ বিষ‌য়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক লোকসঙ্গীত (খ) বি‌ভা‌গে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিদের নি‌য়ে পুনরায় বি‌শেষ ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতার আয়োজন ক‌রে প্রকৃত মূলায়নের মাধ্যমে বিচারক‌দের পক্ষপা‌তের বিষয়ে ন্যায় বিচার প্রতি‌ষ্ঠিত করার জন্য অনু‌রোধ জানিয়েছি।

     

    অনুষ্ঠানের বিচারক মন্ডলীর সদস্য অ‌সিম কুমার নন্দী বলেন, আমরা যারা বিচারক হিসেবে ছিলাম তারা তো কাউকে চিনি না। আবার কারও সাথে ব্যক্তিগত কোনও সমস্যাও নেই, তাহলে কেন সিজান লো‌কসঙ্গী‌তে ন্যায় বিচার পায়‌নি এমন প্রশ্নে আমি বিব্রত বোধ কর‌ছি।

     

    অপর বিচারক ড. ফাল্গুনী চক্রবর্ত্তীর সা‌থে কথা হ‌লে তিনি জানান, স্থানীয় শিক্ষা ক‌মি‌টি থেকে যেভাবে পরামর্শ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে সেভা‌বেই বিচার‌কের দা‌য়িত্ব পালন করা হ‌য়ে‌ছে। পক্ষপাতিত্ব করার যে অভিযোগ করা হয়েছে এটা মোটেও ঠিক না।  আর সিজান সিদ্দিকীর উপর যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হতো তাহলে দেশাত্ব‌বোধক ও র‌বিন্দ্র সঙ্গী‌তে কিভাবে প্রথম স্থান অর্জন ক‌রলো। আর কোনও বাচ্চার সাথে আমাদের শত্রুতা নেই। একজন বাচ্চা সব ক্যাটাগরিতেই যে প্রথম স্থান অধিকার করবে এমন তো না। ত‌বে ভু‌লের উর্দ্ধে কেউ না। তবে এসব নিয়ে এধরণের সমালোচনা হলে পরবর্তীতে বিচারক হিসেবে কেউ দায়িত্ব পালন করতে চাইবে না।

     

    এ বিষ‌য়ে উপ‌জেলা শিক্ষা অ‌ফি‌সের একা‌ডে‌মিক কর্মকর্তা অ‌নিল কুন্ডু জানান, অনুষ্ঠানটি প‌রিচালনার দা‌য়ি‌ত্বে আ‌মি ছিলাম। কিন্তু বিচারক মন্ডলীরা আমার সা‌থে কোনও পরামর্শ করেন নি। তাঁরা আমার হ‌াতে রেজাল্টশীট তু‌লে দি‌য়ে চ‌লে গে‌ছেন। পক্ষপাতমূলক আচরণ করার প্রশ্নই আসে না।

     

    এ বিষয়ে উপ‌জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শ‌ফিউল আলম এর সা‌থে যোগা‌যোগ করা হ‌লে তিনি জানান, বিচার‌কদের কাজ বিচারক ক‌রে‌ছে। এ বিষ‌য়ে আ‌মি কোনও মন্তব্য কর‌তে চাই না।

     

    উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃদাঃ) মোঃ কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত বদলগাছীতেই ছিলাম। এবিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। আমি আসার পর হয়তো অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে যদি প্রতিযোগিতায় বিচারক মন্ডলীর ক্রটি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ