• ইসলাম ও জীবন

    কোরআন হাদীসের আলোকে পবিত্র মিরাজের তাৎপর্য ও শিক্ষা

      প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৮:২৫:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

     

     

    মাওলানাঃ শামীম আহমেদ

    আলোচকঃ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা।

     

     

    পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী যুগান্তময়ী ঘটনা ‘মিরাজ’। এর আভিধানিক অর্থ সিঁড়ি, সোপান, ঊর্ধ্বগমন, বাহন, আরোহণ, উত্থান প্রভৃতি। অন্য অর্থে ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ বা মহামিলন, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ মুজিজা এবং আল্লাহর কুদরতের মহানিদর্শন। নবীকুলের মধ্যে একমাত্র বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এই অনন্য মর্যাদা প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। যাতে তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার ঊর্ধ্বজগতের নিদর্শনাবলি পরিদর্শন ও তাঁর নিয়ামতরাজি স্বচক্ষে অবলোকন করে উম্মতকে তা সবিস্তারে বর্ণনা করতে পারেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)

    সহিহ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ৫০ বছর বয়সে নবুয়তের দশম বর্ষে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রজনীতে মিরাজের বিস্ময়কর ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ওই রাতে তিনি কাবা শরিফের চত্বরে (হাতিমে) অথবা কারও মতে, উম্মে হানির গৃহে শায়িত ও নিদ্রিত ছিলেন। এমন সময় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) সেখানে এসে তাঁকে ঘুম থেকে জাগালেন, অজু করালেন, সিনা চাক করলেন এবং ‘বোরাকে’ চড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে বায়তুল মোকাদ্দাস পৌঁছালেন। সেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ‘ইমামুল মুরসালিন’ হিসেবে সব নবী-রাসুলের ইমামতিতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন। এরপর তিনি আবার বোরাকে চড়ে সপ্তাকাশ পরিভ্রমণ করলেন এবং সেখান থেকে সপ্তম আকাশের ওপর ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক স্থানে পৌঁছালেন, যেখানে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) থেমে গেলেন এবং নবী করিম (সা.) একাকী ‘রফরফে’ চড়ে ‘বায়তুল মামুরে’ উপনীত হলেন।

    এরপর নবী করিম (সা.) রফরফে চড়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন। তিনি এখানে শুধু একটি পর্দার অন্তরাল থেকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করলেন। সেখানে তিনি প্রভুর সঙ্গে একান্ত আলাপে মিলিত হন। আশেক ও মাশুকের মধ্যে সংলাপ ও কথোপকথন হলো। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের বিশেষ রহস্য বুঝিয়ে দিলেন এবং জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করালেন, যাতে এ সম্বন্ধে কথা বলতে তাঁর মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক না হয়। সবশেষে তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বিধান নিয়ে আবার ঐশীবাহনে আরোহণ করে মুহূর্তের মধ্যে ধরণির বুকে ফিরে এলেন। সংক্ষেপে এই হলো মিরাজের প্রকৃত ঘটনা।

    আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থাৎ তাঁর মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সপক্ষে এক বিরাট আলামত, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মুমিনদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ, হেদায়েত, নিয়ামত ও রহমত, ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিজগতের রহস্য উন্মোচন, স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ অবলোকন, পূর্ববতী নবী-রাসুলদের সঙ্গে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ, মহাকাশ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম প্রভৃতি সামনাসামনি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় হাবিবকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছিলেন, যাতে তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করতে পারেন। সুতরাং মিরাজ কোনো স্বপ্ন ছিল না, মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় বাস্তবেই এটা হয়েছিল।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ